ইফতারের আগে যেকোনো সময় দোয়া কবুল হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সময়। ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে বিশেষ করে রোজাদার ক্ষুধা-পিপাসায় ক্লান্ত-শ্রান্ত থাকে। এই সময়ে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশি।
ইফতারের সামগ্রী তৈরি ও সাজানোতে সময়টা হয়ে ওঠে সারাদিনের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। নিশ্চিত দোয়া কবুলের সময় এটা আমাদের শত ব্যস্ততার মধ্যেও স্মরণ রাখতে হবে। তাই এই সময়ে আমরা আগে থেকেই নিজেদের কাজ গুছিয়ে ফেলার চেষ্টা করব।
ইফতারের আগ মুহূর্তে বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া-
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الْعَظِيْم – اَلَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْم উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।
নিচের দোয়াটিও বিশেষভাবে পড়া যায়-
اَلْحَمْدُ للهِ اَللّهُمَّ إنِّيْ أسْئَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْئٍ أنْ تَغْفِرَلِيْ.
উচ্চারণ : ‘আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিআত কুল্লা শাইয়িন আন তাগফিরলি।’ অর্থ : ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য; হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার সর্ববেষ্টিত রহমতের উসিলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)
যে দোয়া পড়ে মহানবী (সা.) ইফতার শুরু করতেন-
بِسْمِ الله - اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আ’লা রিযক্বিকা আফত্বারতু। অর্থ : ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যে রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি। (আবু দাউদ মুরসাল, মিশকাত)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য হাদিসে যথাসময় ইফতার করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ যতদিন ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে ইফতার করবে; ততদিন তারা কল্যাণ লাভ করবে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করাকালীন সময়ে বলতেন-
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
উচ্চারণ : ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’
অর্থ : ‘(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো (আবু দাউদ, মিশকাত)
ইবনে মাজাহর বর্ণনাতে আছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া নিশ্চয় ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ’
রাসুল (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া অগ্রাহ্য করা হয় না (বরং কবুল করা হয়); পিতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া। ’ (বায়হাকি, হাদিস : ৩/৩৪৫; সিলসিলাতুস সহিহা, আলবানি : ১৭৯৭ )
বাইহাকীর বর্ণনাতে আছে, ‘মহান আল্লাহ্ রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতারের সময় ৬০ হাজার লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। ’
তিরমিযির রেওয়াতে আছে, ‘মহান আল্লাহ্ রমজান মাসের প্রত্যেক রাতে বহু জাহান্নামীকে মুক্তি দেন। ’ এসব হাদীসের আলোচনায় বোঝা যায়, ইফতারের আগের সময়গুলো মুমিন জীবনের জন্য অতি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইফতারের আগের সময় অন্য কাজে ব্যয় না করে আল্লাহর দরবারে ব্যয় করার চেষ্টা করুন। যেন আপনি, আপনার আত্বীয়-স্বজনদের নাম মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
১. ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা। ২. ইফতারের সময় অন্য কাজে ব্যস্ত না হয়ে ইফতার করা। ৩. ইফতারের সময় বেশি বেশি দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। ৪. খেজুর, সাদা পানি কিংবা দুধ দিয়ে ইফতার করে মাগরিবের নামাজ জামাতের সহিত পড়া। ৬. ইফতারের সময় ভারী খাবার না খাওয়া। বরং মাগরিবের নামাজ আদায় করে তৃপ্তিসহ পরিমাণ মতো খাবার খাওয়া। আর তাতে শরীর সুস্থ ও সবল থাকে। ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার খেলে জামাআত ও ইবাদত থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
মন্তব্য করুন