সূর্যাস্তের পর কিছু খেয়ে বা পান করে রোজা সমাপ্ত করার নামই ইফতার। ইফতারের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। ‘ইফতার’ আরবি শব্দ। এর অর্থ রোজা ভঙ্গ করা বা সমাপ্ত করা।
ইফতারের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা এবং আধ্যাত্মিক ভাবের যে প্রতিফলন ঘটে, তা সত্যিই অতুলনীয়। হাদিসে আছে, রোজাদারের দুটি সময় আনন্দের ইফতারের সময় এবং আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার সময়।
রোজাদার বান্দারা নানারকম মজাদার খাবার সামনে নিয়ে মহান আল্লাহ পাকের হুকুমের অপেক্ষায় বসে থাকে। যখন হুকুম হয় তখনই খাবার মুখে দেয়। ইফতারের এ বিধান ইসলামের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে আমার কাছে অধিকতর প্রিয় তারাই, যারা আগেভাগে ইফতার করে। (তিরমিজি শরিফ)
ইফতারের সময় সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘সুবহে সাদিক থেকে রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)।
সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা সুন্নাত এবং সূর্যাস্তের আগে ইফতারি সামনে নিয়ে বসে থাকা মুস্তাহাব।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের আগে ইফতার করতেন কয়েকটি টাটকা খেজুর দিয়ে। যদি তিনি টাটকা খেজুর না পেতেন তাহলে শুকনা খেজুর (খুরমা) দিয়ে ইফতার করতেন। আর তাও যদি না পেতেন, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা সমপরিমাণ সওয়াব ওই ব্যক্তিকে দান করবেন যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে সামান্য দুধ দিয়ে কিংবা খেজুর দিয়ে কিংবা পানির শরবত দিয়ে ইফতার করাবে।
আর যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে পেট পুরে আহার করাবে আল্লাহ তায়ালা (কিয়ামতের দিন) তাকে আমার হাউজে কাউসারের পানি পান করিয়ে পরিতৃপ্ত করবেন। এ পানি পান করার পর জান্নাতে প্রবেশ করার আগে সে আর তৃষ্ণার্ত হবে না। (মিশকাত শরিফ)
হজরত যায়েদ ইবনে জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাল, তারও রোজাদারের মতো সওয়াব হবে; তবে রোজাদারের সওয়াব বা নেকি বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)
ইফতারের জন্য কেউ কাউকে দাওয়াত করলে করণীয় কী এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)কে এক মহিলা ইফতারের জন্য দাওয়াত করলেন।
তিনি তাতে সাড়া দিলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে (মহিলাকে) বলছি, যে গৃহবাসী কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তাদের জন্য তার অনুরূপ সওয়াব হবে।
মহিলা বললেন, আমি চাই আপনি ইফতারের জন্য আমার কাছে কিছুক্ষণ অবস্থান করুন (বা এ ধরনের কিছু বলেছেন)। আমি চাই এ নেকি আমার পরিবার অর্জন করুক। (মুসান্নেফে ইবনে আবদুর রাজ্জাক)
আবার কেউ যদি কোনো গরিব রোজাদারকে ইফতারের জন্য আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করে; তাতে সে ওই টাকায় ইফতারও করল; আবার কিছু বাচিয়ে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হলো; এটাও ইফতার করানোর অন্তর্ভুক্ত হবে। আর গরিব ব্যক্তিও আর্থিকভাবে উপকৃত হবে।
আসুন আমরা ইফতারের এই মহা সওয়াব অর্জন করি।
মন্তব্য করুন