কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ০৬:৩১ এএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪, ০৬:৩৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

যে সকল ভ্রমণের সময় রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে

সফরের সময় রোজা। প্রতীকী ছবি
সফরের সময় রোজা। প্রতীকী ছবি

আল্লাহ তায়ালা রোজা প্রত্যেক সক্ষম মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ করেছেন। তবে এ থেকে সাময়িকভাবে হলেও ছাড় দেয়া হয়েছে রোগী ও মুসাফিরকে। অসুস্থতা যেমন সিয়াম পালন থেকে ছাড় পাওয়ার একটি কারণ তেমনি আরেক কারণ সফর।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি এ মাস প্রত্যক্ষ করবে, তাকে এতে রোজা রাখতে হবে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়, কিংবা সফরে থাকে সে অন্যান্য দিন থেকে এ সংখ্যা পূরণ করবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)

তবে সালাত ও সিয়ামে ছাড় পাওয়ার জন্য সফরের দূরত্ব ও মেয়াদ বিবেচ্য বিষয়। নামমাত্র ভ্রমণ ও প্রবাস জীবনকে যেন ইবাদতে বিশেষ সুবিধা লাভের কারণ হিসেবে কেউ ব্যবহার করতে না চায়, সেজন্য এসব শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য দূরত্ব একটি শর্ত হিসেবে গণ্য। হেঁটে স্বাভাবিক গতিতে তিন দিনে যে পরিমাণ পথ অতিক্রম করার রীতি তখনকার আরবে প্রচলিত ছিল, সেটাকে এ ব্যাপারে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এই তিন দিনের পথ বা তিন মঞ্জিল পরবর্তীকালের পরিমাপে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার সাব্যস্ত করা হয়।

তা ছাড়া কুরআন মজিদের শব্দচয়ন থেকে অনুমিত হয়, নিছক প্রবাস জীবন নয় বরং চলমান অবস্থা শর্ত। তাই সফরকালে উল্লেখযোগ্য সময় বা কমপক্ষে ১৫ দিন যাত্রাবিরতির কারণে সালাতে কসর ও সিয়ামে ছাড়ের হুকুম রহিত হয়ে যায়।

ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় রোজা না রাখার সুযোগ রয়েছে। তবে অস্বাভাবিক কষ্ট না হলে রোজা রাখাই উত্তম। আর অস্বাভাবিক কষ্ট হলে রোজা রাখা মাকরুহ। এ অবস্থায় রোজা না রেখে পরে তা কাজা করবে।

তাবেয়ি আছিম (রহ:) বলেন, হজরত আনাস (রা:)কে সফরকালে রোজা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘যে রোজা রাখবে না সে অবকাশ গ্রহণ করল। আর যে রোজা রাখল সে উত্তম কাজ করল।’(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা )

তবে সফর অবস্থায় রোযা রাখা শুরু করলে নেহায়েত কষ্ট ছাড়া তা আর ভাঙা জায়েয নয়। কেউ ভেঙে ফেললে গুনাহগার হবে। তবে কাফ্ফারা আসবে না। শুধু কাজাই যথেষ্ট।

হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘কেউ রোজা রেখে সফরে বের হলে রোযা ভাঙবে না। তবে যদি পিপাসার কারণে প্রাণনাশের আশঙ্কা হয় তাহলে রোজা ভাঙতে পারবে, পরে তা কাজা করে নেবে। যদি এমন হয় যে, মুসাফির সফরের কারণে রোজা রাখেনি, কিন্তু দিন শেষ হওয়ার আগেই মুকিম হয়ে গেল। তাহলে দিনের অবশিষ্ট সময় রমজানের মর্যাদা রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। তবুও পরবর্তী সময়ে এ রোযার কাজা অবশ্যই করতে হবে।

তাবেয়ি ইবরাহিম নাখায়ী (রাহ:) বলেন, যে মুসাফির রমজানের দিনে (সফরের অবস্থায়) খাবার খেয়েছে, সে মুকিম হয়ে গেলে দিনের বাকি অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকবে।(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা)

সফর ক্লান্তিকর হওয়াই স্বাভাবিক। জাগতিক ক্রিয়াকলাপের প্রয়োজনে মানুষকে সফরে যেতেই হয়। তাই ইসলামি শরিয়তে মুমিন বান্দাদের জন্য সফরকালে সালাত ও সিয়াম আদায়ে কিছুটা সুবিধা দেয়া হয়েছে। যদি কারো সফর ব্যতিক্রমী হিসেবে আরামদায়কও হয় তবুও তার জন্য এ সুবিধা রহিত হবে না।

একজন তাবেয়ি এ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন হজরত ওমর ফারুককে। জবাবে হজরত ওমর ফারুক (রা:) বলেন, তুমি যেমন আমাকে প্রশ্ন করেছ, আমিও তেমনি আল্লাহর রাসূল সা:-কে এ প্রশ্ন করেছিলাম। বলেছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল সা:, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমরা সফরে থাকবে, তখন তোমরা যদি আশঙ্কা করো যে কাফেররা তোমাদের বিপদে ফেলবে, তাহলে নামাজে কসর করায় তোমাদের কোনো অন্যায় হবে না। এখন তো আমরা নিরাপদ হয়ে গেছি। জবাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এটা আল্লাহ তায়ালার দান। এ দান তোমরা গ্রহণ করো। এ জন্য ইমাম আবু হানিফার মতে সফরে নামাজের কসর করা বাধ্যতামূলক। অবশ্য অন্য ইমামরা তা ঐচ্ছিক বলেছেন।

কিন্তু সফরে রোজা রাখা না রাখা দুটিরই অনুমতি আছে, এ ব্যাপারে সবাই একমত। কোনটি ভালো, রাখা নাকি না রাখা, সে সম্পর্কে দুই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। এক হাদিসে দেখা যায়, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সফরে রোজা রাখা খুব ভালো। কিন্তু আরেক হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন, সফরে রোজা রাখা নেক কাজ নয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ উক্তির প্রেক্ষাপট থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। তা এই যে, এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জায়গায় লোকজনের ভিড় দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলেন। সেখানে একজনকে ছায়ায় রেখে সেবা করা হচ্ছে। তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন লোকটি রোজা রাখার কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তখন তিনি বললেন, সফরে রোজা রাখা নেক কাজ নয়। আরেক সফরে সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ রোজা রাখলেন, আবার কেউ কেউ রোজা রাখলেন না। এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলে রোজাদারেরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। আর যারা রোজা রাখেননি, তারাই তাঁবু টানানো, বাহনগুলো সামলানো ইত্যাদি সব কাজ করলেন। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, বে-রোজাদারেরা সব পুণ্য হাসিল করল।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাইসির হেলিকপ্টারের যে সমস্যার কথা জানালেন তুর্কি পরিবহনমন্ত্রী

সমর্থকের বাড়িতে নৈশভোজ, চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অর্থদণ্ড

ভোটের আগের রাতে গোপন প্রচারণা, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রাইভেটকার আটক

বিলাসবহুল গাড়িতে সরকারি লোগো সাঁটিয়ে ৭ লাখ ইয়াবা পাচার

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

বাবার খোঁজে ভারতে যাচ্ছেন এমপি আনারের মেয়ে

ফোর্বসের তালিকায় স্থান পাওয়া ৯ তরুণকে ছাত্রলীগের শুভেচ্ছা

মোবাইল কিনে না দেওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাজার বসিয়ে অবৈধ বিদ্যুতের ব্যবসা

র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু, ক্যাম্প কমান্ডারসহ প্রত্যাহার ৪

১০

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৮২ শতাংশ : বিবিএস

১১

ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল শিশুর

১২

জাল স্বাক্ষরে ওষুধ বিতরণের অভিযোগ

১৩

ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আরবদের মুনাফেকি ও সুপার হিরোদের অবদান

১৪

নোয়াখালীতে ৩০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ

১৫

নিপুনের পেছনে বড় কোনো শক্তি আছে : ডিপজল

১৬

ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে চবিতে সাইক্লিস্টের র‍্যালি

১৭

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আইআইইউসি প্রতিনিধিদলের সৌজন্য সাক্ষাৎ

১৮

আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে আপত্তিকর ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগ

১৯

রাইসির মরদেহ কোথায়, জানাজার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত?

২০
X