কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জলবায়ু পরিবর্তন অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি করছে, পানি সম্মেলনে পরিবেশমন্ত্রী

একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত নবম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ছবি : সৌজন্য
একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত নবম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ছবি : সৌজন্য

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষ করে পানিকে প্রভাবিত করে যা মানবজাতি এবং বাস্তুতন্ত্রের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আজ ২৪ জানুয়ারি, (বুধবার) একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত নবম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো আমরা যে হারে তৈরি জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা তৈরি করছি সে হারে তার সমধানের পথ বের করতে পারছি না। আমরা কার্যকর সমাধান ছাড়া এই সংকট মোকাবেলায় অবদান রাখতে পারব না।

তিনি আরও বলেন, টেকসই উন্নয়নের অন্যতম উপাদান পানি। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে আমাদের অবশ্যই বুদ্ধিমত্তার সাথে এটিকে ব্যবহার করতে হবে।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে আমাদেরই প্রথম ১০০ দিনের পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি বিস্তৃত কর্মসূচি রয়েছে। সামগ্রিক সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সরকার, বিজ্ঞানী, এনজিও এবং বেসরকারী খাতকে সম্পৃক্ত করে একটি মাল্টি-স্টেকহোল্ডার প্ল্যাটফর্ম গঠন করা এখন সময়ের দাবী। অনেক প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোগ এবং স্টার্টআপ আবির্ভূত হয়েছে, কিন্তু প্রধান স্টেকহোল্ডারদের অংশিদারিত্বের অভাবে প্রায়শই সেগুলি সফলতার মুখ দেখে না। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করে এমন প্রকল্পগুলি পাইলটিং করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । আমরা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে নয়, সমাধান খোঁজার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে চাই। আশাকরি এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফলাফল আমাদের নতুন দিক নির্দেশনা দিবে। জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য আমরা যে সংস্থাগুলির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি তাদের মধ্যে একশনএইড বাংলাদেশ অন্যতম। এই প্রচেষ্টায় আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আমি অন্যদেরও স্বাগত জানাই”।

‘পানি, নদী এবং জলবায়ু পরিবর্তন: সহিষ্ণুতার ক্ষেত্র নির্মাণ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকার একটি হোটেলে দুই দিনব্যাপী নবম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এবছর দশটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই পানি সম্মেলন। বিষয়গুলো হল- জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদীর অধিকার-এর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক; জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদী: ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতা; উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তি এবং সহিষ্ণুতা; পানি, নদী, এবং শহুরে সহিষ্ণুতা: অবকাঠামো এবং বাস্তুতন্ত্র; নদী, সহিষ্ণুতা, এবং জনগণ; নদীর অধিকার: অববাহিকার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা; বহুপাক্ষিক পানি সহযোগিতা এবং ন্যায্যতা; জীবন্ত যাদুঘর এবং স্থানীয় সম্প্রদায়সমূহের সহিষ্ণুতা; পানি এবং নদী: তরুণদের সম্পৃক্ততা টেকসই ভবিষ্যত: প্রযুক্তিগত সমাধান তৈরি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নার্দিয়া সিম্পসন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কূটনীতিক ও নীতিনির্ধারকদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। আমরা ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং দুর্যোগ দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ, তবে একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের রোল মডেল। বাংলাদেশে আমরা সরকারের সাথে কৃষি খাত উন্নয়ন এবং পানি ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে কাজ করছি। আমরা উদীয়মান নেতাদের জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

উদ্বোধনী বক্তব্যে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উচ্চ ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এই সমস্যা মোকাবেলায় অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে একত্রিত করে, নতুন ধারণার জন্ম দিবে এবং স্থানীয় কমিউনিটি কী করতে পারে এবং কী করতে চায় তার উপর জোর দিবে। আমাদের পানি ও নদী ব্যবস্থাপনায় নারী ও তরুণদের সম্পৃক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। অধিকন্তু, একটি নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত এবং জলবায়ু কর্মীদের সাহায্য করতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে”।

সম্মেলনের প্রথম দিনে একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির চেয়ারপারসন ইব্রাহিম খলিল আল জায়াদ বলেন, বাংলাদেশে ৮০০ টিরও বেশি নদী রয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ তাদের নিজের ভিটা থেকে বাস্তুচ্যুত হতে। আমরা ক্রমবর্ধমান জোয়ার, অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং শুষ্ক ভূমি দেখতে পাই যেখানে কমউনিটির মানুষজন সংগ্রাম করছে। কিন্তু আমরা মানুষের উদ্যম, তাদের সহিষ্ণুতাও দেখতে পাই এবং এর জন্যই আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। এই সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও সুপারিশ জলবায়ু ন্যয্যতায় অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ভূরাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করে। গাজা যুদ্ধের প্রথম দুই মাসে উত্পন্ন বিশ্ব-উষ্ণায়ন নির্গমন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের ২০ টিরও বেশি বার্ষিক কার্বন ফুটপ্রিন্টের চেয়েও বেশি। জলবায়ু ভবিষ্যতকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, মনস্তাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মূলধারায় যুক্ত করা দরকার।

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে এবং একই সঙ্গে পানির স্তর কমছে। সুতরাং আমরা পানির অপচয় বা দূষণ কমাতে আমাদের সচেতনতা প্রয়োজন। আমরা ৩টি প্রধান নদী ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছি এবং আমাদের পানির উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে। অধিকন্তু, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পানির ৯২ শতাংশই আসে বাইরের দেশ থেকে। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলও খুব নিচু। এই সবই জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় দেশের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।

তিনি আরও বলেন, যদি আমরা নীতি ও কর্মকাণ্ডে আসি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত জলবায়ু পরিবর্তন বা পানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ২৬টি নীতি ও আইন রয়েছে, কিন্তু নীতিমালার বিষয়বস্তু কী তা অধিকাংশ মন্ত্রণালয় বা সংস্থা জানে না। সেখানে কাজগুলো সমন্বিতভাবে হয় না। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের গল্প বলতে হবে, অন্যথায় প্রকৃত সমস্যার সমাধান কখনোই হবে না।

নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম, ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং ডেপুটি হেড অফ ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন, সুইডেন দূতাবাস; মোহাম্মদ মফিজুর রহমান, বিজ্ঞানী, পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ (পিআইকে), শরীফ জামিল, কাউন্সিল মেম্বার, ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্স; ড. নজরুল ইসলাম, ভাইস-চেয়ার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা); শেখ রোকন, রিভারাইন পিপল, মহাসচিব; ড. সামিয়া সেলিম, অধ্যাপক ও পরিচালক, সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব); একরাম কবির, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, কমিউনিকেশনস, ব্র্যাক ব্যাংক; এম হাফিজুল ইসলাম খান, পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লাইমেট জাস্টিস বাংলাদেশ; আবুল কালাম আজাদ ম্যানেজার, জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন, একশনএইড বাংলাদেশ; আনিকা এন হক, সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যান্যদের মধ্যে প্রথম দিনের সম্মেলনে নদী ও পানি বিষয়ক বক্তব্য ও বিভিন্ন প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জামায়াত নেতাদের জরুরি বৈঠক

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর শোক

বায়তুশ শরফ স্বর্ণপদক পাচ্ছেন জবি শিক্ষক ড. মো. ইব্রাহীম খলিল

‘দ্য উইজার্ড অব দ্য ক্রেমলিন’ কীভাবে জন্ম নিল পুতিনের রাশিয়া

কোথায় গেল  বাপ্পি লাহিড়ীর বিপুল স্বর্ণ?

নির্বাচনে নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সাংবাদিক আমিনুর রহমান টুকু মারা গেছেন

রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই জাপার : নাহিদ

আবারও আঁচল–আরজু

বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ না জিতলেও যত টাকা পাবে বাংলাদেশ

১০

ট্রলারসহ ১৮ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি

১১

চবি-বাকৃবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

১২

বিএনপি সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল : দুলু

১৩

ভার্চুয়ালি হাজিরা দিলেন সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ২৪ আসামি 

১৪

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জিয়ার সমাধিতে প্রকৌশলীদের শ্রদ্ধা

১৫

সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের ভাই চুয়াডাঙ্গায় গ্রেপ্তার

১৬

তারেক রহমানের হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ : লায়ন ফারুক

১৭

পুত্রবধূর বঁটির কোপে শ্বশুর নিহত

১৮

আল-আকসা মসজিদের নিচে গোপনে খনন করছে ইসরায়েল, নেপথ্যে কী?

১৯

এতদিন ক্ষমতায় থাকলেন কেন, প্রশ্ন জামায়াত নেতার

২০
X