পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত তিন দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহ্ আজম। উপজেলা পরিষদের স্বাধীনতা সোপানে (মুক্তমঞ্চ) অনুষ্ঠিত এ বই মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। সভাপতিত্ব করেন সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি, (রোববার) বইমেলার উদ্বোধন শেষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহ্ আজম বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শাহাদতবরণকারী সব শহীদ, ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনে সব শহীদ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মবলিদানকারী শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আমরা শোককে শক্তিতে পরিণত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে তৈরি করব।
বই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বই একটি সমৃদ্ধ জাতি এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারে। বই আমাদের অনেক পুরোনো অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত করে এবং পুরোনো একজন ব্যক্তির যে উপলব্ধি সেটিকে জানবার সুযোগ করে দেয়। বই সম্পর্কে নানা মানুষের নানা উপলব্ধি রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো উপলব্ধি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তিনি বলেছেন, বই অতীত এবং বর্তমানের সেতু বন্ধন রচনা করতে পারে। সুতরাং বইকে সঙ্গে করে আমরা একটি জাতি এবং একটি সুদীর্ঘ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নির্মাণ করতে পারি। বই হচ্ছে শত সহস্র বছরের ব্যক্তিবর্গ, বিজ্ঞানী, শিল্পী ও সাহিত্যিকের যে গচ্ছিত উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা সেই অভিজ্ঞতাকে দুই মলাটের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা। বিশিষ্ট ফরাসি দার্শনিক দেকার্তের মতে, ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সঙ্গে কথা বলা।
রবীন্দ্র উপাচার্য আরও বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা যখনই একটি নতুন এলাকা দখল করত তখন তারা প্রথমেই সেই অঞ্চলের লাইব্রেরিকে ধ্বংস করে দিত। কারণ, তারা জানত, লাইব্রেরির মধ্যেই থাকে বহু মানুষের ভাষার উপলব্ধি এবং এই বইয়ের মধ্যেই উচ্চারিত হয়েছে সব মুক্তিকামী মানুষের মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণা। বইয়ের মধ্যে থাকে একজন লেখকের শিল্পঋদ্ধ এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির বয়ান, সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। বইয়ের মধ্যে একটি জাতির আত্মপরিচয় ও স্বাতন্ত্র্যশক্তির যে গুপ্তসঞ্চয় রয়েছে, তা সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের জন্য সবসময় ভীতিপ্রদ ছিল।
অধ্যাপক শাহ্ আজম আরও বলেন, জীবনকাহিনি, সংস্কৃতির ঐতিহ্য, দর্শন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র, জ্যামিতি, বীজগণিত, কল্পকাহিনিসহ মানবীয় চিন্তার সামগ্রিক পরিচয় একমাত্র বই পড়লেই জানা সম্ভব। বই মানুষের জীবনবোধকে পাল্টে দিয়ে নীরবে একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে। বই পড়ার মাধ্যমে গত শতাব্দীর একজন মানুষের সঙ্গে আপনি আন্তরিক একটি সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন। রবি উপাচার্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি পড়তে সবাইকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, বইটিতে বঙ্গবন্ধুর নানাবিধ উপলব্ধি, সংগ্রামী জীবন এবং ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তিল তিল করে একটি ভূখণ্ডকে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করার নিরন্তর সংগ্রামের কথা লিপিবদ্ধ আছে।
তিনি আরও বলেন, আপনি বইটি পড়লে আপনার ভেতরে আস্তে আস্তে দেশপ্রেমের উপলব্ধি তৈরি হবে। তুর্কি নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক ওরহান পামুককে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘আমি একদিন একটি বই পড়লাম আর এর মাধ্যমে আমার জীবনটাই পাল্টে গেল’। বইয়ের যে অসীম ক্ষমতা ও সম্ভাবনা, বই যেভাবে আমাদের পাল্টে দেয় আমরা সেই বিষয়টিকে কাজে লাগাতে চাই। উপাচার্য তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ার প্রতি আহ্বান জানান। একইসঙ্গে পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির জন্য গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনা এবং গ্রন্থ মুদ্রণ ও প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌরসভার মেয়রসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন