লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (ডব্লিউটিসি) ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটের "হোম অব ক্রিকেটে" এই মহারণ যেন শুধুই একটি শিরোপার লড়াই নয়—এটি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ইতিহাস, সমালোচনা এবং পরিচিত শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই।
অস্ট্রেলিয়া যেখানে ইতোমধ্যে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন এবং বিশাল অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দল হিসেবে ফাইনালে নামছে, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলছে আত্মপ্রমাণের জন্য। এখনো পর্যন্ত তাদের একমাত্র আইসিসি শিরোপা এসেছে ১৯৯৮ সালের ‘নকআউট ট্রফিতে’। এবারের ডব্লিউটিসি ফাইনালে উঠে আসা নিয়েও রয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ ধারণা—সমালোচকদের মতে, তুলনামূলক সহজ সূচির কারণেই তারা ফাইনালে। অথচ গত সাতটি টেস্টেই তারা জয় পেয়েছে, যার আগে পাঁচ ম্যাচে তাদের ছিল মাত্র এক জয়।
একশ বছরের ইতিহাস, নতুন উপলক্ষ
দুই দল এর আগেও লর্ডসে টেস্ট খেলেছে—১৯১২ সালের ত্রিদেশীয় টেস্ট টুর্নামেন্টে, যেখানে অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল। সেই ম্যাচের ১১৩ বছর পর, আবারও সেই মাঠে মুখোমুখি এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, তবে এবার উপলক্ষ্য অনেক বড়।
গত তিন দশকে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে গড়ে উঠেছে এক রোমাঞ্চকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে তাদের শেষ দেখা ২০২২-২৩ সিরিজটি ছিল বেশ একপেশে, যেখানে অস্ট্রেলিয়া ছিল নিয়ন্ত্রণে। তা সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার কাগিসো রাবাদার মতে, এই ফাইনালে উত্তেজনা এবং আগ্রাসন—দুটিই থাকবে।
দুই দলের প্রস্তুতি ও একাদশ
অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তুতি বরাবরের মতোই স্বাচ্ছন্দ্যময়—গল্ফ, রিল্যাক্সেশন, অনুশীলনের চেয়ে মনঃসংযোগ ধরে রাখাই মূল লক্ষ্য। ঠিক যেমন তারা ২০২৩ সালের ফাইনালের আগে করেছিল। অধিকাংশ খেলোয়াড়ই এর আগে বিশ্বমঞ্চে পারফর্ম করেছেন, এবং দলের মূল অংশই তিন ফরম্যাট মিলিয়ে গত চার বছরে তিনটি শিরোপা জিতেছে।
অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ—স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজলউড ও লায়ন—ধরা হচ্ছে আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা। ব্যাটিংয়ে আছেন স্টিভেন স্মিথ ও ফর্মে থাকা ট্রাভিস হেড, যিনি টানা দুটি বৈশ্বিক ফাইনালে ম্যাচজয়ী সেঞ্চুরি করেছেন।
তবে একাদশ নিয়ে কিছু প্রশ্নও রয়েছে। ক্যামেরন গ্রিন ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন, তিনি এখন ব্যাট করবেন ৩ নম্বরে—যা তার ফার্স্ট-ক্লাস ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয়বার। অপরদিকে মার্নাস লাবুশানে খেলবেন ওপেনার হিসেবে, যা টেস্টে তার প্রথমবার।
দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশ তেমন চমকপ্রদ নয়, তবে বেশিরভাগ ব্যাটারই অজিদের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে নবাগত। কেবল মার্করাম ও বাভুমা এর আগে খেলেছেন। তবে আইপিএলের সুবাদে অজি বোলারদের কাছে ট্রিস্টান স্টাবস ও রিকেলটনের ব্যাটিং কিছুটা চেনা।
মন্তব্য করুন