দলে জায়গা নিয়ে কখনো খুব বেশি আলোচনায় থাকেন না। কিন্তু প্রতিটি টেস্টেই নিজের কাজটা নিখুঁতভাবে করে যান। তিনি তাইজুল ইসলাম- বাংলাদেশ টেস্ট দলের নির্ভরতার আরেক নাম। কলম্বো টেস্টে সেই চেনা চেহারাতেই আবারও জ্বলে উঠলেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে যখন আরও বড় লিডের পথে ছিল, তখন পাঁচ উইকেট নিয়ে দলের আশার বাতি জ্বালালেন তাইজুল। তার ঘূর্ণিতে ফিরলেন ওপেনার নিশাঙ্কা ও উদারা, অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা এবং শেষের দিকের দুই ব্যাটার রত্নায়েকে ও আসিথা ফার্নান্দো। তার দাপটেই শ্রীলঙ্কার লিড ৩০০ পেরোতে পারেনি- থেমেছে ২১১ রানে।
তবে শুধু ম্যাচ নয়, ব্যক্তিগত অর্জনের দিক থেকেও আজকের দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকল তাইজুলের জন্য। ২০১৮ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি ৫ উইকেট নেওয়ার তালিকায় উঠে এসেছেন তিনি। এ নিয়ে ১৪ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন তিনি, সমান সংখ্যকবার নিয়েছেন ভারত ও বিশ্বের এক নম্বর বোলার জাসপ্রীত বুমরাও। অথচ বুমরার তুলনায় ১৯ ইনিংস কম বোলিং করেছেন তাইজুল- তার মাত্র ৬৯ ইনিংসেই এই কীর্তি।
এদিকে পেছনে ফেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্সকেও, যিনি এই সময়ের অন্যতম সেরা পেসার। তালিকায় আরও রয়েছেন নাথান লায়ন (১২ বার), রবিচন্দ্রন অশ্বিন (১১ বার) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (১০ বার)।
তাইজুলের টেস্ট উইকেট সংখ্যা এখন ২৩৭। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি সাকিব আল হাসানের চেয়ে তিনি পিছিয়ে আছেন মাত্র ৯ উইকেটে। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের নভেম্বরেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে সাকিবকে ছাড়িয়ে যাবেন এই নির্ভরযোগ্য স্পিনার।
বিদেশের মাটিতে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার সংখ্যাও এখন পাঁচ- বাংলাদেশের হয়ে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। তার সমান পাঁচবারই ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব, যদিও তার ইনিংস সংখ্যা ছিল বেশি।
তাইজুলের আরও একটি উল্লেখযোগ্য রেকর্ড হলো- বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫ উইকেট নেওয়ার তালিকায় তিনি এখন চতুর্থ। ১৭ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে রয়েছেন এই অবস্থানে। আর তিনবার এমন কীর্তি গড়লেই ছুঁয়ে ফেলবেন কিংবদন্তি ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে (২০)। তবে এই তালিকার শীর্ষে থাকা রঙ্গনা হেরাথের রেকর্ড (৩৬ বার) ভাঙা এখনো অনেক দূরের লক্ষ্য। মজার বিষয় হলো, ভেট্টোরি ও হেরাথ- দুজনই বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন তাইজুলের সঙ্গে।
নীরব কিন্তু ধারাবাহিক- তাইজুল ইসলাম হয়ে উঠছেন বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা নাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো গ্ল্যামারের আলোয় আসবেন না, কিন্তু পরিসংখ্যান ও কর্মফল বলছে- তিনি এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়।
মন্তব্য করুন