১২ মিনিট পর্যন্ত বাংলাদেশের ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনের সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু শেষের প্রশ্নের উত্তরে যেন পরিস্থিতি বদলে গেল মুহূর্তেই। রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে জাতীয় দলের সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে তখন আর স্বাভাবিক মনে হয়নি। তার কণ্ঠ থেকে যেন জমে থাকা কিছু রাগ-ক্ষোভ বেরিয়ে এলো। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রমাণ উপস্থাপনের দাবিও তুললেন তিনি। বিসিবির চাকরি নিয়েও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন দেশের অভিজ্ঞ এই কোচ। চাকরি করতেই হবে—এমনটা ভাবছেন না বলেও জানান সালাহউদ্দিন।
গত বছরের নভেম্বরে জাতীয় দলের সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন সালাহউদ্দিন। এরপর থেকেই দলের ভালো মন্দের সঙ্গে মিশে গেছে তার নাম। আলাদা ব্যাটিং কোচ না থাকায় লিটন দাস, তাওহীদ হৃদয়দের শান দেওয়ার কাজটাও তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তবে তার মেয়াদে দলের পারফরম্যান্স এখনও স্বস্তিদায়ক নয়। একের পর এক সিরিজে ব্যর্থতার সঙ্গে ফুটে উঠেছে ব্যাটারদের দুর্বলতাও। সবকিছু মিলিয়ে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কোচদেরও। এরই মধ্যে সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগের তথ্য প্রকাশ পায় গণমাধ্যমের রিপোর্টে। সেসবের বিষয়ে এবার মুখ খুললেন সালাহউদ্দিন নিজেই। জানালেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো তুলে ধরে তার স্বপক্ষে প্রমাণ দেওয়ার, ‘আপনারা যেমন বলেন যে, টিমে অনেক অভিযোগ! কিন্তু অভিযোগগুলো আপনারা যদি লিখে দিতেন ভালো হতো। আপনাকে তো প্রমাণ দিতে হবে। ঠিক না? আপনি প্রমাণ দিলে সেটা ওই কোচের জন্যও ভালো হতো যে, না আমি যদি ভুল করে থাকি আমি ওই জায়গাটা শুধরাবো। কিন্তু আপনি একটু (প্রমাণ ছাড়া) লিখে দিতে পারেন না! আমি জানি আমি কি, আমি আমার জায়গায় শতভাগ সৎ কিনা।’
দেশের অন্যতম সেরা কোচ হিসেবে পরিচিত সালাহউদ্দিন। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল থেকে শুরু করে লিটনদেরও প্রিয় কোচের তালিকায় তার নাম। সেসব বিবেচনায় জাতীয় দলের কোচ করা হয়েছিল সালাহউদ্দিনকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার যোগদান দলকে খুব বেশি লাভবান করেনি। অন্তত পারফরম্যান্স সেকথাই বলে। কিন্তু নিজের কাজের প্রতি সৎ জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমি হয়তো ভালো কোচ নাও হতে পারি—ঠিক আছে। আমি যদি ভালো না হই, তাহলে আমাকে বোর্ড সরায়ে দিবে, কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু আপনি কখনো কাউকে কোনো কিছু বিচার-বিবেচনা না করে যদি লেখেন, এটা আসলে ঠিক না।’
বিসিবিতে চাকরি না করলেও সমস্যা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এমন না যে, এখানে চাকরি করতেই হবে। আমার অনেক কিছু করার আছে। এখানে আমি নিজের ইচ্ছায়ও আসি নাই যে; আমি চাইছি আমাকে চাকরি দেন, আমি এখানে চাকরি করবো—এমন তো কিছু না! দলের ভালোর জন্য আমার যেটা মনে হয়, দলের সেরা যেটা মনে হবে; সেটা যদি সামান্য পরিমাণও কিছু পরিবর্তন করা যায়; তাহলে পরিবর্তন করার চেষ্টা করবো।’
শুধু জাতীয় দলই নয়, বিসিবি চাইলে সবচেয়ে নিচের স্তরেও কাজ করতে আপত্তি নেই সালাহউদ্দিনের, ‘দেখুন আমি কোচ। আমাকে যদি আপনি কালকে বলেন যে, সালাহউদ্দিন তুমি অনূর্ধ্ব-১৩ তে গিয়ে কোচিং করাও, আমি কিছু মনে করব না। আমার এখানে ট্যাগ লেখা নেই যে, আমি কোচ শুধু জাতীয় দলেরই। সুতরাং এটা নিয়ে আমার কখনোই ইগো সমস্যা নেই, কোনো কিছু্ও নেই।’
কাজের প্রতি সততাকেই গুরুত্ব দিতে চান দেশের অভিজ্ঞ এই কোচ।
মন্তব্য করুন