ভারতীয় ক্রিকেটে ২০১১ বিশ্বকাপ ছিল এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। সেই বিশ্বকাপ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন বীরেন্দ্র শেবাগ—২০৮ বলে ৩৮০ রান, গড় ৪৭.৫০ ও স্ট্রাইক রেট ১২২.৫৮। কিন্তু জানেন কি, এই বিশ্বকাপ জয়ীর ক্যারিয়ারই একসময় প্রায় থেমে গিয়েছিল ধোনির এক সিদ্ধান্তে!
সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেবাগ জানান, ২০০৭-০৮ সালের কমনওয়েলথ ব্যাংক সিরিজে প্রথম তিন ম্যাচ খেলেই তিনি বাদ পড়েছিলেন। আর সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখনকার অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
‘প্রথম তিনটা ম্যাচ খেলেছিলাম, তার পর ধোনি আমাকে ড্রপ করল। এরপর আর টিমে ফিরতে পারিনি অনেকদিন। তখন মনে হয়েছিল, যখন প্লেয়িং ইলেভেনেই নেই, তখন আর ওয়ানডে খেলে কী লাভ?’ — জানিয়েছেন শেবাগ।
এই হতাশা থেকেই তিনি ওডিআই থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তও প্রায় নিয়ে ফেলেছিলেন। ঠিক তখনই এগিয়ে আসেন শচীন টেন্ডুলকার। ক্রিকেট বিশ্বের ‘লিটল মাস্টার’ শেবাগকে বুঝিয়ে বলেন, এ ধরনের মানসিক দুঃসময় সবারই আসে, তবে আবেগের বশে কখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
শেবাগের ভাষায়, “আমি শচীনের কাছে গিয়ে বললাম—‘ওডিআই থেকে রিটায়ার করার কথা ভাবছি।’ তখন শচীন বলল—‘১৯৯৯-২০০০ সালে আমিও একটা এমন সময় পার করেছি, যখন মনে হয়েছিল ক্রিকেট ছেড়ে দিই। কিন্তু সেই সময় পার হয়ে গেছে। তুমি এখন আবেগী হয়ে আছ। ১–২টা সিরিজ সময় নাও, তারপর সিদ্ধান্ত নাও।’”
শচীনের সেই কথাই শেষ পর্যন্ত শেবাকে বদলে দেয়। সিরিজ শেষে দারুণ ফর্মে ফিরে আসেন তিনি এবং ২০১১ বিশ্বকাপে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে দলকে এনে দেন উজ্জ্বল সূচনা। প্রতিটি ম্যাচের প্রথম বলেই চার হাঁকানো তার সেই ট্রেডমার্ক স্টাইল আজও রোমাঞ্চ জাগায় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে।
বিশ্বকাপের পর আরও ২ বছর ওয়ানডে খেলেন শেবাগ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১১ সালে ইন্দোরে ২১৯ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংসও খেলেন, যেখানে তিনিই ছিলেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক।
শচীনের এক খোলা-হৃদয়ের পরামর্শ যদি না থাকত, তাহলে হয়তো শেবাগের ঐতিহাসিক ২০১১ বিশ্বকাপ কিংবা ২১৯ রানের ইনিংসের সাক্ষী হতে পারত না ক্রিকেট বিশ্ব। নির্দিষ্ট সময়ে একটুখানি সমর্থন একজন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার ঘুরিয়ে দিতে পারে—শেবাগের গল্প তারই উজ্জ্বল প্রমাণ।
মন্তব্য করুন