এশিয়া কাপের সুপার ফোরের তৃতীয় ম্যাচে ভারতের কাছে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছে পাকিস্তান। রিজার্ভ ডে’তে পড়া ম্যাচে বাবর আজমের দল কুলদীপ যাদবের ঘূর্ণিতে ১৮ ওভার বাকি থাকতেই হার মেনে নিয়েছে। কলম্বোতে সুপার ফোরের বৃস্টি বিঘ্নিত ম্যাচে পাকিস্তানকে ২২৮ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে রোহিত শর্মার দল।
ব্যাট হাতে বিরাট কোহলি এবং লোকেশ রাহুলের অপরাজিত সেঞ্চুরির পর বল হাতে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কুলদীপ যাদব। ৮ ওভার বল করে ২৫ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের দেওয়া ৩৫৭ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১২৮ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাবররা। আর তাতে ২২৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে পাকিস্তান। দুই দলের মধ্যকার লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হারের রেকর্ডও এটি।
বিশাল ব্যবধানে এই ম্যাচ জিতে সুপার ফোরের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে উঠেছে ভারত। বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জিতলেও এই ম্যাচের হার তিন নম্বরে নামিয়েছে পাকিস্তানকে। টেবিলের দুইয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। দুই ম্যাচের দুটোতেই হেরে তলানিতে বাংলাদেশ।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে কেবল ২ উইকেট হারিয়ে ৩৫৬ রান করে ভারত। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ১২৮ রানে অল আউট পাকিস্তান। ইনজুরির কারণে বাবরদের শেষ দুই ব্যাটার নাসিম শাহ এবং হারিস রউফ এদিন ব্যাটিং করেননি।
এর আগে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রোহিত শর্মা আর শুভমান গিলের দারুণ ওপেনিং জুটির পর আজ জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন বিরাট কোহলি এবং টুর্নামেন্টে প্রথমবার খেলতে নামা লোকেশ রাহুল। তাদের দাপটে দাড়াতেই পারেনি পাকিস্তানি বোলাররা। ৫০ ওভারে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ২ উইকেটে ৩৫৬ রান।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আজ ২ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে ব্যাটিং শুরু করে টিম ইন্ডিয়া। তখনো বাকি ম্যাচের ২৫.৫ ওভার । বৃষ্টির কারণে অবশ্য যথাসময়ে খেলা শুরু হয়নি। নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘন্টা পর ভেজা মাঠ শুকানোর পর দুই অপরাজিত ব্যাটার কোহলি আর রাহুল শুরুর ৫-৭ ওভার দেখেশুনে শুরু করেন।
সময় গড়ানোর সাথে সাথে দুজনের ব্যাটেই রানের ফুলঝুড়ি ছোটে। প্রায় চার মাসের বেশি সময় পর মাঠে ফিরেই প্রথমে ফিফটি তুলে নেন লোকেশ রাহুল। তাও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দীদের বিরুদ্ধে। ফাহিম আশরাফের করা ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি তুলে নেন রাহুল। এরপর কোহলি ফিফটি তুলে নেন ৫৫ বলে। কোহলির ছিল এটি ৬৬তম ফিফটি। ফিফটি করার পর দুজনেই আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। সেইসঙ্গে যোগ হয় পাকিস্তানি ফিল্ডারদের ব্যর্থতা।
দুজনে সেঞ্চুরিও করেছেন কাছাকাছি সময়ে। ঠিক ১০০ বলে ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেন রাহুল। এর পরপরই শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে সিঙ্গেল নিয়ে মাত্র ৮৪ বলে ক্যারিয়ারের ৪৭ম সেঞ্চুরি পূরণ করেন বিরাট ‘কিং’ কোহলি। সেঞ্চুরির আগেই অবশ্য নিজের ক্যারিয়ারের আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেন কোহলি। দ্রুততম সময়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৩ হাজার রান পূর্ণ করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ২ উইকেটে ৩৫৬ রান তোলে ভারত।
বিরাট কোহলি ৯৪ বলে ৯ চার ৩ ছক্কায় ১২২* এবং লোকেশ রাহুল ১০৬ বলে ১২ চার ২ ছক্কায় ১১১* রানে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তানি বোলারদের মাঝে সবচেয়ে খরুচে ছিলেন শাহিন আফ্রিদি। ১০ ওভারে ৭৯ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। অপর উইকেটটি নিয়েছেন শাদাব খান; তিনিও দিয়েছেন ৭১ রান।
৩৫৭ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৪ রানেই প্রথম দুই উইকেট হারায় পাকিস্তান। উইকেট হারানোর পাশাপাশি রানও এগিয়েছে খুব ধীরগতিতে। এসময় পাকিস্তানের ত্রাতা হিসেবে নামে বৃষ্টি। তবে কিছুক্ষণ পরই আবার খেলা গড়ায় মাঠে। সেখানে কোনো ওভার না হারালেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি পাকিস্তানের।
বৃষ্টির পর ব্যাটিংয়ে নেমে বিপদ আরও বেড়েছে বাবর আজমদের। ১২তম ওভারে মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট হারায় তারা। শার্দুল ঠাকুরের দুর্দান্ত ইনসুইং ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন রিজওয়ান। আউট হওয়ার আগে ৫ বল খেলে ২ রান করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
ধীরগতির ব্যাটিং করে ২৭ রানে ফেরেন ফখর জামান। সালমান আঘার ও ইফতিখার আহমেদের ব্যাট থেকে এসেছে ২৩ রান। তাদের বিদায়ের পর দ্রুতই শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। আর শেষ দুই ব্যাটার নাসিম শাহ এবং হারিস রউফ ইনজুরির কারণে ব্যাটিংয়ে না নামায় পাকিস্তানের ৮ উইকেট নিয়েই জয় পায় ভারত। ভারতের পক্ষে যাদব নেন ৫ উইরকট আর বুমরাহ,পান্ডিয়া ও ঠাকুর নেন একটি করে উইকেট।
মন্তব্য করুন