সাধারণত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ক্রিকেটারদের অবসরের পর আর্থিক কোনো সমস্যা হয় না। বিভিন্ন চুক্তি থেকে ও অবসর গ্রহণের পর সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ড থেকে অবসর ফান্ড বা অবসর-পরবর্তী ভাতা পেয়ে থাকেন তারা। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের অন্যতম পরিচিত মুখ কিংবদন্তি গ্রেগ চ্যাপেলও তা পাাওয়ার কথা থাকলেও পাননি। পরে সেই ভাতা দিতে চাওয়া হলেও দম্ভভরে সেই ভাতা নিতে অস্বীকার করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট কিংবদন্তি। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন আর্থিক সমস্যায় থাকা সাবেক এই ক্রিকেটারের অবস্থা এতটাই খারাপ যে তার সতীর্থরা তার জন্য তহবিল সংগ্রহ করছে।
১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর কোচ, নির্বাচক কিংবা ধারাভাষ্যকার হিসেবে বর্ণাঢ্য এক জীবন কাটিয়েছেন বিখ্যাত চ্যাপেল ভ্রাতৃ ত্রয়ীর মেজ গ্রেগ চ্যাপেল। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মতো বড় দলের কোচ-পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের বিভিন্ন পদে বিভিন্ন সময়েও কাজ করেছেন। আর্থিকভাবে সচ্ছলতা ছিল, তাই অবসর ভাতার চিন্তাও করেননি। আর এই কারণেই অবসর ভাতা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে এক ব্যবসাতে বিনিয়োগও করেছিলেন। আর সেই ব্যবসায় লোকসান গুনেই বড় ধরনের আর্থিক ঝামেলায় পড়েছেন এই অস্ট্রেলিয়ান। আর্থিক সেই দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতেই অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি গ্রেগ চ্যাপেলের জন্য তহবিল গঠন করছেন তার সতীর্থ সাবেক ক্রিকেটাররা। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম নিউজ কর্পের বরাত দিয়ে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে এই খবর।
সংবাদমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চ্যাপেলের অনিচ্ছা সত্ত্বেও গণ–অর্থায়নবিষয়ক প্ল্যাটফর্ম ‘গোফান্ডমি’ টাকা তুলতে শুরু করেছে। এ উপলক্ষে গত সপ্তাহে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন অস্ট্রেলিয়ার টিভি উপস্থাপক ও সাংবাদিক এডি ম্যাকগুয়ার। এ সময় গ্রেগ চ্যাপেলের দুই ভাই ইয়ান চ্যাপেল এবং ট্রেভর চ্যাপেলও উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেগ চ্যাপেলকে সত্তর ও আশির দশকের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মনে করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৮৭ টেস্ট ও ৭৪ ওয়ানডে খেলেছেন চ্যাপেল। দুই সংস্করণ মিলিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৯৭ ম্যাচে, শতক আছে ২৭টি। ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার সময় তিনিই ছিলেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
৭৫ বছর বয়সী চ্যাপেল বর্তমানে অ্যাডিলেডের একটি ভাড়াবাসায় থাকেন। ‘গোফান্ডমি’ এরই মধ্যে ৭২ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৮০ লাখ টাকা) সংগ্রহ করেছে।
যদিও চ্যাপেল নিজেকে নিঃস্ব মানতে নারাজ। এ ব্যাপারে নিউজ কর্পকে তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই এটা বলছি না যে আমি ফতুর হয়ে গেছি। এমন কিছু বলতে চাই না, যেটা শুনলে মনে হবে খুব বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কারণ, আমি ততটা কষ্টে নেই।’
বিখ্যাত চ্যাপেল পরিবারের একজন হওয়ায় অনেকে ভাবতে পারেন, গ্রেগ চ্যাপেলও অনেক আয়েশেই থাকেন। তবে মানুষের এ ভুল ভাবনা ভেঙে দিয়েছেন তিনি, ‘আমার মনে হয় বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, আমি ক্রিকেট খেলেছি, তাই আমার জীবন বিলাসিতায় ভরা। কিন্তু সত্যিটা হলো আমি বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত নই। এটাও ঠিক যে আমি খুব গরিব নই। তবে এখনকার খেলোয়াড়েরা যে সুবিধাগুলো পায়, আমি তা পাই না।’
কিংবদন্তি গ্রেগ চ্যাপেলের দুই বন্ধুপ্রতিম সতীর্থ পিটার মালোনি ও ডেভিড ইভান্স জানিয়েছেন, চ্যাপেল’স ফাউন্ডেশন গৃহহীন যুবকদের দাতব্য সংস্থাগুলোর জন্য লাখ লাখ টাকা জোগাড় করেছে। এবার চ্যাপেলের জন্যই তহবিল গড়ে তোলা হচ্ছে। মালোনি বলেছেন, ‘গ্রেগ (চ্যাপেল) ওর কাজ নিয়ে খুব গর্বিত। সে যেটা বলেছে, তার চেয়েও কঠিন কাজ করেছে।’ নিজের ফাউন্ডেশন থেকে টাকা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও চ্যাপেল কখনো একটি কানাকড়িও নেননি বলে জানিয়েছেন মালোনি।
অর্থের ব্যবস্থা করায় মালোনি ও ইভান্সকে ধন্যবাদ জানিয়ে চ্যাপেল বলেছেন, ‘আমার দুই বন্ধু বুঝতে পেরেছে, আমার যত অর্থ পাওয়া উচিত ছিল, ততটা পাইনি। আমি ও জুডি (চ্যাপেলের স্ত্রী) যাতে অবসর–পরবর্তী জীবনটা ভালোভাবে কাটাতে পারি, ওরা সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছে।’
মন্তব্য করুন