২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগের কথা। সেবার স্বাগতিক কেনিয়া, পাকিস্তান আর উগান্ডা নিয়ে চারজাতির একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলে বাংলাদেশ। সে সময়ে আইসিসির সদস্যভুক্ত দেশ ছিল না উগান্ডা। তাই তো অফিশিয়াল কোনো রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায় না। সেবার কেনিয়াকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিয়েছিল উগান্ডা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তখনো শক্তিশালী দল কেনিয়া। কদিন পর বিশ্বকাপেও খেলে তারা। তখন পাওয়া সেই জয়টি বেশ উজ্জীবিত করে উগান্ডাকে।
এবার জিম্বাবুয়ে আর সেই কেনিয়াকে টপকে নতুন ইতিহাস গড়ল উগান্ডা। আফ্রিকান বাছাইপর্বের দ্বিতীয় দল হিসেবে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে দেশটি। আগামী বছর জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরবর্তী আসর। ক্রিকেটের যে কোনো বিশ্বকাপে এই প্রথম দেখা যাবে আফ্রিকার দেশটিকে।
বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনের পর উগান্ডাকে ঘিরে অনেকের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অনেকের মনে জেগেছে নানা প্রশ্ন। উগান্ডায় কি ক্রিকেট ঐতিহ্য বলে সত্যি কিছু আছে? সেই দেশের ক্রিকেট কাঠামোই বা কেমন?
উগান্ডায় ক্রিকেট আছে অনেক দিন ধরেই। অন্য অনেক দেশের মতো উগান্ডায় ক্রিকেটের উৎপত্তি ইংরেজের হাত ধরেই। প্রতিনিধিত্ব ছিল ভারতীয়দেরও। এতে খুব একটা সময় লাগেনি স্কুলগুলো এবং সব গোত্রে ক্রিকেট ছড়িয়ে পড়তে। সর্বপ্রথম ১৯৫১ সালে হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। যদিও সেই ম্যাচের কোনো আর্কাইভ নেই।
মূলত ‘স্কুল ক্রিকেট’ আর ‘মিনি ক্রিকেট’ উগান্ডা জাতীয় দলের সবচেয়ে বড় ‘পাইপাইন’। ১৯৭৫ সালে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশ নেয় পূর্ব আফ্রিকা নামে একটি দল। সেই দলে খেলেছেন কেনিয়া, তানজানিয়া, জাম্বিয়া ও উগান্ডা ক্রিকেটাররা। ১৯৯৭ সালে পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা দলের অংশ হয়ে খেলে আইসিসি ট্রফিও খেলেন দেশের ক্রিকেটাররা।
১৯৯৮ সালে আইসিসির সহযোগী সদস্যের মর্যাদা পায় উগান্ডা। দক্ষিণ আফ্রিকার পর এই অঞ্চলে ক্রিকেটের দ্বিতীয় পরাশক্তি হয়ে উঠতে পারে তারা, সে সময়ে এমনটাই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু এরপরই হোঁচট খায় দেশটি। মাঝে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেললেও সিনিয়র পর্যায়ে বাছাইপর্ব পেরুতে পারেনি তারা।
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাড়ানো হয় দলের সংখ্যা। স্বাভাবিকভাবেই এতে সুযোগ বেড়ে যায় নতুন অনেক দলের। তবে উগান্ডার বড় বাধা ছিল জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া ও কেনিয়ার মতো বড় নাম। সম্প্রতি আবারও উত্থানের গল্প লিখতে শুরু করেছে কেনিয়া। আর টানা দুবার বিশ্বকাপ খেলেছে নামিবিয়া। আর আফ্রিকার অঞ্চলের পুরোনো ক্রিকেটীয় শক্তি জিম্বাবুয়ে।
এই তিন দলকে টপকে বিশ্বকাপের আসরে জায়গা করে নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়! উগান্ডার এমন সাফল্য কিন্তু হুট করে আসেনি। এ বছরই তারা জিতেছে বড় দুটি টুর্নামেন্ট। সর্বশেষ গত জুনে আফ্রিকা কন্টিনেন্টাল কাপের শিরোপা জিতে উগান্ডা। ফাইনালসহ ওই টুর্নামেন্টে ১২ ম্যাচের ১১টিই জয় পায় দেশটি।
উগান্ডার বর্তমান দলে আছেন ১৯ বছর বয়সী পেসার প্যাসকেল মুরুঙ্গী। তেমনি আছেন ৪৩ বছর বয়সী ফ্র্যাঙ্ক এনসুবুগাও। বয়সভিক্তির পর্যায়ে খেলেছেন ৩২ বছর বয়সী অধিনায়ক ব্রায়ান মাসাবা। সব প্রজন্মের জন্যই উগান্ডার ক্রিকেটের সোনালি সময় চলছে। কারণ উগান্ডা যে খেলবে বিশ্বকাপ!
মন্তব্য করুন