চট্টগ্রামে জমি রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়েরের নির্ধারিত সময়সীমা আগামী ৯ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে। আইনজীবীরা সতর্ক করেছেন, সময়মতো মামলা না করলে পরবর্তী পর্যায়ে শুধু সিভিল কোর্টে গিয়ে প্রতিকার নিতে হবে। এতে ভুক্তভোগীদের জন্য জটিলতা এবং দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রামে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ সালে দুই বছরের মেয়াদে গঠিত হয়। এর আগে দেশের অন্যান্য ৪১ জেলায় ট্রাইব্যুনাল থাকলেও চট্টগ্রামে দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রক্রিয়ার পরেই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম শুরু হলেও প্রচারণার অভাব এবং নাগরিকদের অজ্ঞতার কারণে অনেক মানুষ এখনো মামলা দায়ের করতে পারেননি।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ইতোমধ্যেই আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে, মামলার সময়সীমা অন্তত আরও এক বছর বাড়ানোর জন্য। আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নগরীর বিস্তীর্ণ ভূ-প্রকৃতিক বৈচিত্র্য এবং শিক্ষিত-অশিক্ষিত মানুষের বিভিন্ন স্তরকে বিবেচনায় এনে সময়সীমা বৃদ্ধি প্রয়োজন। এছাড়া, সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্য বৃদ্ধির পরও মামলা দায়েরের সময়সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, যা জনগণের স্বার্থে যথেষ্ট নয়।
চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র সিভিল আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ উল আবরার মোহাম্মদ তৌকি কালবেলাকে, বহু মানুষ এখনও ট্রাইব্যুনাল ও তার কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন না। খতিয়ান এবং জরিপ সংক্রান্ত ভুল সংশোধনের জন্য সময়সীমা বাড়ানো দরকার।
সিভিল আইনজীবী অ্যাডভোকেট শুভ আইচ বলেন, অনেকে জানেনই না যে তাদের জমি অন্যের নামে জরিপে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই নির্ধারিত সময় জনগণের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় অপ্রতুল। সময়সীমা না বাড়ালে অনেকেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রাম শহর এবং জেলা বিস্তীর্ণ। প্রচারণা সীমিত থাকায় সব মানুষ মামলার সুযোগ পায়নি। তাই জনগণের স্বার্থে অন্তত এক বছর সময় বাড়ানো উচিত। ৯ সেপ্টেম্বরের পর ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের বন্ধ হয়ে যাবে।
ভুক্তভোগী চসিক ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, কয়েক দশক ধরে দখলে থাকা আমার জমি সাম্প্রতিক জরিপে অন্যের নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে। বিষয়টি জানার পরই জানতে পারছি, মামলা দায়েরের সময় শেষ হতে চলেছে। যদি সময়সীমা বাড়ানো না হয়, প্রতিকার পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
সিনিয়র আইনজীবীরা আরও বলছেন, পূর্বে সিভিল কোর্টে জমি সংশোধনের জন্য মামলা করতে দীর্ঘ সময় লাগত এবং খরচও বেশি। বিশেষায়িত ট্রাইব্যুনাল এই প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও সহজ করেছে। তবে সময়সীমা সীমিত থাকায় এখনো অনেক মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এদিকে, চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর আশরাফ হোসেন রাজ্জাক কালবেলাকে বলেন, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা ফাইলিংয়ের সময়সীমা আগামী ৯ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারি পক্ষের কোনো নির্দেশনা বা উদ্যোগ এখনও না আসায় নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছি না।
এদিকে, জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম চলছে, তাই মামলা দায়েরের সুযোগও সমানভাবে দীর্ঘ হওয়া উচিত। এটি ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে সহায়ক হবে।
আইনজীবীরা আশা করছেন, সরকারের আইন-নীতি নির্ধারকরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন এবং জনগণের স্বার্থে মামলা দায়েরের সময়সীমা অন্তত এক বছর বাড়ানো হবে, যাতে আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়।
মন্তব্য করুন