জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে কত কী না ঘটে যায়! বছরের ৩৬৫ দিনে অগুনতি স্মৃতির সঙ্গে জমা হয় দুঃখ-বেদনার স্মৃতিও। এ বছরে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনের প্রতিচ্ছবিও অনেকটা এমনই। সুখস্মৃতির তুলনায় দুখস্মৃতির পরিমাণই বেশি। সালতামামির আজকের পর্বে থাকছে দেশের ক্রিকেট-
কিউই দুর্গে হানা: এ বছরের শেষ দিকে নিউজিল্যান্ড দুর্গ ভাঙে বাংলাদেশ দল। সাদা বলের ক্রিকেটে কিউইদের মাটিতে অবশেষে জয়ের দেখা পায় টাইগাররা। প্রথম জয় পায় ওয়ানডেতে। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ খোয়ানোর পর নেপিয়ারে তৃতীয় ওয়ানডেতে জয় তুলে নেয় নাজমুল হোসেন শান্ত দল। পরে টি-টোয়েন্টিতেও কিউইদের মাটিতে অধরা জয় পায় টাইগাররা।
ঘরের মাঠে ধারাবাহিক: আবার বছর শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় দিয়ে। তবে এবার তা ঘরের মাঠে। ২০২২ সালের শেষ দিকে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের মাঠে প্রথমবারের মতো টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। কিউইদের বিপক্ষে সেটি ছিল টাইগারদের প্রথম টেস্ট জয়। চলতি বছরের শুরুতে নিজেদের মাঠেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় লাল-সবুজেরা। আবার চলতি মাসেই সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে কিউইদের বিপক্ষে ১৫০ রানের বড় জয় পায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এ বছর মার্চে তিন ম্যাচে সিরিজে ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে ব্যর্থ: কিন্তু ২০২৩ সালে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট, ওয়ানডে বিশ্বকাপে চরমভাবে ব্যর্থ হয় সাকিব আল হাসানের দল। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে ছিলেন কোচ ও অধিনায়ক। কিন্তু প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তি একেবারে শূন্য। ৯ ম্যাচের মাত্র দুটিতে জয় পায় বাংলাদেশ। আফগানদের হারিয়ে বিশ্ব আসর শুরু করা সাকিবরা হেরে যায় আইসিসির সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডসের কাছেও। কোনো মতে পয়েন্ট টেবিলের আটে থেকে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা ধরে রাখে তারা।
উজ্জ্বল নারী দল: পুরুষ দলের বাজে পারফরম্যান্সের ভিড়ে বছরজুড়ে ধারাবাহিক সাফল্যের হাসিতে হেসেছে বাংলাদেশ নারী দল। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতে নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ড্র করে। এ মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র করে নারী দল। এরপর নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ও সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
এশিয়া কাপ যুবদলের: বছরের শেষ দিকে সবচেয়ে বড় সাফল্য নিয়ে আসে অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ভারত, পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে যুবারা প্রথমবারের মতো অর্জন করে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব।
অদ্ভুত আউটে বাংলাদেশের নাম: এ বছর দুটি অদ্ভুত আউটের স্বাক্ষী হয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। দুটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। ৬ নভেম্বর দিল্লিতে বিশ্বকাপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে ‘টাইমড আউট’ করে বাংলাদেশ। নিজেদের আত্মসমর্থনে যুক্তি দেখান সাকিব। বলেন, নিয়মের মধ্যে টাইমড আউটের আবেদন করেন তারা। ঠিক একমাস পর ৬ ডিসেম্বর, মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে হাত দিয়ে বল ধরে দেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ‘অবস্ট্র্যাক্টিং দ্য ফিল্ড আউট হন মুশফিকুর রহিম।
তামিম-সাকিব দ্বন্দ্ব: এ বছর প্রকাশে আসে বাংলাদেশ দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের দ্বন্দ্ব। বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাওয়ার আগে এক সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন সাকিব। সেখানে তামিমকে নিয়ে বেশ সমালোচনা করেন তিনি।
এমপি নির্বাচনে সাকিব: আসছে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। জন্মস্থান মাগুরা-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচন করছেন সাকিব।
তামিমের অবসরকাণ্ড: জুলাইয়ে ঘরের মাঠে আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলছিল বাংলাদেশ দল। এর মাঝ পথে ৬ জুলাই হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। তার এমন সিদ্ধান্তে আলোড়ন তুলে দেশজুড়ে। তবে পরদিনই গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কথায় অবসর ভেঙে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণা দেন তামিম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে খেলা হয়নি তার। কারণ যতটা না চোট-সংক্রান্ত, তার চেয়ে বেশি ওপেনিং থেকে নিচের দিকে ব্যাটিং করার প্রস্তাব পাওয়া।
মন্তব্য করুন