বর্তমানের ক্রিকেট প্রেক্ষাপটে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটই যে বোর্ডগুলোর জন্য টাকা নিয়ে আসছে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ধুঁকতে থাকা ক্রিকেটে দর্শকদের দেখা একমাত্র টি-টোয়েন্টিতেই পাওয়া যায়। তাই বিশ্বের বেশিরভাগ ক্রিকেট বোর্ডই এখন ঝুঁকছে ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগের দিকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর আরও কয়েকটি থাকলেও ক্রিকেট ভক্তদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শুধু একটিই টুর্নামেন্টই সেটি হলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বা বিপিএল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছর হওয়ার কারণে এবার এই টুর্নামেন্ট ঘিরে আকর্ষণও বেশি। ১৯ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে এবারের বিপিএলের আসর। সাত ফ্রাঞ্চাইজি দল নিয়ে হওয়া এই আসর শেষ হবে পহেলা মার্চ। আসর শুরু হওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক বিপিএলের দলগুলো সম্পর্কে। তৃতীয় পর্বে থাকছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স সম্পর্কে।
গত বিপিএলটা রীতিমতো দুঃস্বপ্নের মতো গিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। সবার শেষে থেকে আসর শেষ করতে হয়েছে তাদের। অথচ এর আগের তিন আসরেই বন্দরনগরের দলটি প্লে অফ খেলেছে। দলটি অবশ্য একবারই ফাইনাল খেলেছে তাও ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম কিংস নামে। সেবার শিরোপা পাওয়া হয়নি তাদের। ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাদের।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় অঞ্চলের এই দলটিতে নেই বড় কোনো তারকা। দলের কোচও কোন তারকা নন। তারপরও গত আসরের সবচেয়ে খারাপ দলটির স্বপ্ন এবার প্লে-অফ খেলার। দলটি প্রথম ম্যাচের আগে অনুশীলন শুরু করেছে পিকেএসপি মাঠে।
আসরের শুরুতে অবশ্য চট্টগ্রাম তাদের ভরসার অন্যতম প্রধান অস্ত্র বিদেশী ক্রিকেটারদের সবাইকে পাচ্ছে না। তবুও দলের প্রধান কোচ তুষার ইমরানের টার্গেট প্লে-অফ। তিনি মিডিয়াকে বলেন ‘অন্য সব দলের মতো আমাদেরও স্বপ্ন এবার কোয়ালিফাইয়ার্স রাউন্ড খেলা। এজন্য কঠিন লড়াই করতে হবে। কারণ তিনটি দল খুবই শক্তিশালী। সুতরাং আমাদের সেরাটাই দিতে হবে।’
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের জন্য বিপিএলের দশম আসর শুরু হবে প্রথম দিনই। ১৯ জানুয়ারির দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধ্যা ৭টায় সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে তারা।
এবারের আসরের ফাইনাল পহেলা মার্চ। সাত দলের টুর্নামেন্টে এবার শিরোপা জয়ের জন্য শক্তিশালী দল গড়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, রংপুর রাইডার্স ও ফরচুন বরিশাল। বাকি চার দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, খুলনা টাইগার্স, সিলেট স্ট্রাইকার্স ও দুর্দান্ত ঢাকা। টি-২০ টুর্নামেন্ট বলে কোনো দলকেই হালকা মেজাজে নেওয়া ঠিক নয় বলে মনে করেন চট্টগ্রাম কোচ, ‘ক্রিকেট হচ্ছে দিনের খেলা। তার ওপর টি-২০ ফরম্যাটের খেলা। আসরে শক্তিশালী দল থাকলেও কাউকে খাটো চোখে দেখা ঠিক হবে না।’
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স দলে বলার মতো বড় কোনো তারকা নেই। ঘরের ছেলে তামিম ইকবালও নেই। তবে জাতীয় দলে খেলছেন এবং খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিকেটার রয়েছেন বেশ কয়েকজন।
তরুণদের নিয়ে গড়া দলটির অধিনায়ক অফ স্পিন অলরাউন্ডার শুভাগত হোম। দলটির ব্যাটিং লাইনের ভরসা বিদেশি ক্রিকেটাররা। দল বিদেশি ক্রিকেটারের কোটায় নিয়েছে পাকিস্তানের আবদুল্লাহ শফিক, মোহাম্মদ হারিস, মোহাম্মদ হাসনাইনকে। এ ছাড়া বিদেশি কোটায় রয়েছে আফগানিস্তানের নাজিবুল্লাহ জাদরান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোহাম্মদ ওয়াসিম, আয়ারল্যান্ডের কার্টিস ক্যাম্ফার, অস্ট্রেলিয়ার স্টিফেন এসকিনজাই, শ্রীলঙ্কার কুশল মেন্ডিস ও ওমানের বিলাল খান। এ ছাড়া স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম, শুভাগত হোম, জিয়াউর রহমান, শাহাদাত হোসেন দীপু, সৈকত আলি, আল আমিন হোসেন, শহিদুর ইসলাম, নিহাদুজ্জামান ও সালাউদ্দিন শাকিল।
দল নিয়ে কোচ তুষার অবশ্য বেশ আত্মবিশ্বাসী, ‘দলটি তরুণদের নিয়ে গড়া। স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে বড় কোনো তারকা ক্রিকেটার নেই। তবে যারা আছেন সবাই দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত। এ ছাড়া বিদেশি ক্রিকেটাররাও ভালো মানের। যদিও শুরুতে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার পরও অন্য যারা আসবেন তারা পরীক্ষিত।’
দেশি ও বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া দলের শক্তিশালী দিক হচ্ছে ব্যাটিং। তেমনটাই জানিয়েছেন কোচ তুষার, ‘আমাদের শক্তিশালী দিক ব্যাটিং বিভাগ। দলটিতে রয়েছেন বিশ্বকাপ খেলা তানজিদ তামিম, নাজিবুল্লাহ জাদরান, আবদুল্লাহ শফিক, শুভাগত হোম, শাহাদাত দীপুর মতো ব্যাটার। তবে বোলিং বিভাগও একেবারেও ঠিক দুর্বল নয়।’
কোচের আত্মবিশ্বাসের পরও এবার ভক্তদের নজর থাকবে গত আসরের দুঃস্বপ্ন চট্টগ্রাম কাটাতে পারে কি না তার ওপর।
একনজরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স
স্থানীয় খেলোয়াড়
শুভাগত হোম, জিয়াউর রহমান, নিহাদউজ্জামান, শহীদুল ইসলাম, তানজিদ হাসান, আল আমিন হোসেন, সৈকত আলী, ইমরানুজ্জামান, শাহাদাত হোসেন, সালাউদ্দিন শাকিল, হুসনা হাবিব।
বিদেশি খেলোয়াড়
কুশল মেন্ডিস, আভিস্কা ফার্নান্ডো, মোহাম্মদ হারিস, নজিবউল্লাহ জাদরান, আবদুল্লাহ শফিক, মোহাম্মদ হাসনাইন, স্টিভ এসকিনাজি, কার্টিস ক্যাম্ফার, বিলাল খান।
অধিনায়ক: শুভাগত হোম।
কোচ: তুষার ইমরান।
গত বিপিএলে অবস্থান: সপ্তম।
মন্তব্য করুন