বার্সেলোনার ফুটবল ইতিহাসে আরেকটি স্বর্ণালি অধ্যায় যুক্ত হলো। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এসপানিওলের মাঠে ২-০ গোলের জয় তুলে নিয়ে লা লিগার শিরোপা নিশ্চিত করেছে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। এই জয়ে শুধু লিগ নয়, ফ্লিকের অধীনে প্রথম মৌসুমেই ঘরোয়া ট্রেবল (লা লিগা, কোপা দেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ) অর্জন করল কাতালান জায়ান্টরা।
রিয়াল মাদ্রিদ আগের দিন মায়োর্কাকে হারিয়ে বার্সার পেছনে লেগেছিল মাত্র ৪ পয়েন্টের ব্যবধানে। তবে ইয়ামালের অসাধারণ গোল এবং এসপানিওলের ১০ জনে পরিণত হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে জয় তুলে নেয় বার্সা। ফলে ২ ম্যাচ হাতে রেখেই ৭ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে শিরোপা নিশ্চিত করে ইয়ামাল-রাফিনিয়ারা।
ম্যাচশেষে আবেগঘন ফ্লিক বললেন, 'এই দলটা একটা পরিবার। সবাই জানে তাদের ভূমিকা কত গুরুত্বপূর্ণ। এমন ড্রেসিংরুম আমি কখনো পাইনি।'
ফ্লিক মনে করিয়ে দেন প্রয়াত টিম ডাক্তার কার্লেস মিনারোর কথাও— 'তিনি এখন ওপর থেকে দেখছেন আমাদের। আমরা তাঁকে ভুলিনি।'
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ডানদিক থেকে কাটা পড়ে বাম পায়ের দুর্দান্ত শটে গোল করেন লামিন ইয়ামাল। তার সতীর্থ পেদ্রি বলেন, 'এমন গোল সে নিয়মিত অনুশীলনে মেরে থাকে। অসাধারণ প্রতিভা। ওকে উপভোগ করতে দিতে হবে।'
এরপর ইয়ামালের পেটে কনুই মারার অপরাধে লাল কার্ড দেখেন এসপানিওলের লিয়ান্দ্রো কাবরেড়া। ১০ জনের বিপক্ষে খেলে আরেকটি গোল করে জয় নিশ্চিত করে বার্সা।
এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চার ম্যাচেই জিতেছে বার্সা— যার মধ্যে ছিল ৪-০ গোলের একটি বড় জয়। ফ্লিক বলেন, 'রিয়ালের বিপক্ষে আমাদের পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। এই ম্যাচগুলো আমি ভুলব না।'
ইন্টার মিলানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে বিদায় নিলেও লামিন ইয়ামাল জ্বলজ্বল করেছেন ইউরোপিয়ান মঞ্চে। ১৭ বছর বয়সী এই বিস্ময়বালক করেছেন ৫ গোল ও ৫ অ্যাসিস্ট।
চেলসির তারকা কোল পামারও মুগ্ধ ইয়ামালে, 'বিশ্বাসই হয় না, ওর বয়স মাত্র ১৭। আমার চোখে সে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। সবকিছু ওর দিয়েই শুরু হয় বার্সার।'
পুরো মৌসুমে বার্সা ১৩টি লিগ ম্যাচে ৪ বা ততোধিক গোল করেছে। ইয়ামাল, রাফিনিয়া, লেভানডভস্কির আক্রমণভাগের সঙ্গে পেদ্রির সুস্থ থাকা মাঝমাঠে বড় ভূমিকা রেখেছে।
আক্রমণাত্মক ফুটবল, উচ্চ লাইন আর ভয়ডরহীন প্রেসিং— হান্সি ফ্লিক বার্সেলোনাকে ফিরিয়ে এনেছেন তাদের ঐতিহ্যে। আর তাতেই অভিষেক মৌসুমেই পেলেন ‘ট্রেবল’-এর স্বাদ।
এটা বার্সেলোনার ইতিহাসে ২৮তম লা লিগা শিরোপা। রিয়ালের ৩৬ ট্রফির পরেই অবস্থান তাদের। এবার ভবিষ্যতের লক্ষ্য আরও বড়, যেন ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বও আবার ছুঁয়ে ফেলা যায়।
লা লিগা, কোপা দেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ— সবই ঘরে। এক মৌসুমে তিন ট্রফির গর্ব নিয়ে কাতালানরা এখন উদযাপনে ব্যস্ত। তবে লামিন ইয়ামালের মতো প্রতিভা হাতে থাকলে, এই উদযাপন চলবে আরও অনেক বছর।
মন্তব্য করুন