টানা তিনটি বড় আন্তর্জাতিক শিরোপা ঘরে তুলেছে আর্জেন্টিনা। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা, ২০২২ সালের শেষ দিকে কাতার বিশ্বকাপ এবং ২০২৪ কোপা আমেরিকা—সবটিতেই সেরা ছিল আলবিসেলেস্তেরা। তবে ফুটবল মাঠের এই রাজত্ব আর্থিক বাজারমূল্যে প্রতিফলিত হচ্ছে না।
জার্মান ফুটবল পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট Transfermarkt সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি জাতীয় ফুটবল দলের বাজারমূল্য। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা বাজারমূল্যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের থেকেও পিছিয়ে রয়েছে।
ব্রাজিল এগিয়ে, আর্জেন্টিনা পেছনে
ব্রাজিলের বর্তমান দলটির বাজারমূল্য ৯০৯.৩ মিলিয়ন ইউরো, যেখানে আর্জেন্টিনার মূল্য ৭৬১.৫ মিলিয়ন ইউরো। অথচ দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তুলনা করলে স্পষ্টভাবে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপজয়ী দলটির স্কোয়াডে রয়েছে লাউতারো মার্টিনেজ (মূল্য: €৮০ মিলিয়ন), জুলিয়ান আলভারেজ (€১০০ মিলিয়ন), এনজো ফার্নান্দেজ (€৮০ মিলিয়ন)-এর মতো তরুণ ও ধারাবাহিক তারকা। তবে বয়স বেড়ে যাওয়া ও জাতীয় দলে অনিয়মিত হওয়ায় মেসি, ডি মারিয়া, ওতামেন্দিদের মূল্য কমে এসেছে। অন্যদিকে ব্রাজিল দলে বেশ কিছু তরুণ ও ক্লাব ফুটবলে জনপ্রিয় মুখের আধিক্যই তাদের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রফি না পেলেও শীর্ষে ইংল্যান্ড
সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো—সাম্প্রতিক সময়ে কোনো বড় আন্তর্জাতিক শিরোপা না জিতলেও বাজারমূল্যে শীর্ষে রয়েছে ইংল্যান্ড। তাদের মোট দলগত বাজারমূল্য ১.৪০ বিলিয়ন ইউরো!
দলে রয়েছে জুড বেলিংহাম (€১৮০ মিলিয়ন), বুকায়ো সাকা (€১৪০ মিলিয়ন), ফিল ফোডেন (€১৫০ মিলিয়ন), ডেক্লান রাইস, হ্যারি কেইনের মতো বিশ্বসেরা তারকারা। বিশ্বকাপ বা ইউরো না জিতলেও ইংলিশ ফুটবলারদের প্রিমিয়ার লিগে খেলার কারণে তাদের বাণিজ্যিক মূল্য অনেক বেশি।
অন্যান্য বড় দলগুলো কোথায়?
এই তালিকা প্রমাণ করে, শুধু মাঠের সাফল্য নয়, খেলোয়াড়দের বয়স, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং ইউরোপিয়ান ক্লাবে খেলার উপস্থিতিই বাজারমূল্যে বড় প্রভাব ফেলে।
বাজারমূল্য কি আসল মানদণ্ড?
বাজারমূল্য আসলে খেলোয়াড়দের বর্তমান ফর্ম, বয়স, ক্লাব পারফরম্যান্স, ইনজুরি অবস্থা ও ট্রান্সফার সম্ভাবনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। তাই মাঠের ট্রফি জয়ের সঙ্গে সরাসরি বাজারমূল্য ওঠানামা করে না। আর্জেন্টিনা সাফল্যে এগিয়ে থাকলেও দলটির কিছু খেলোয়াড় ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে চলে যাওয়ায় বাজারমূল্যে তারা ব্রাজিলের চেয়ে পিছিয়ে। অন্যদিকে ইংল্যান্ড, স্পেন ও ফ্রান্সের মতো দলগুলো তরুণ প্রতিভা ও বিশাল ক্লাব ফুটবল উপস্থিতির কারণে এগিয়ে রয়েছে।
ট্রফি জয় নিঃসন্দেহে গৌরবের বিষয়, তবে বর্তমান ফুটবলে বাজারমূল্য হয়ে উঠেছে আরেকটি বড় নির্দেশক। আর্জেন্টিনার ট্রফির ঝুলি ভারী হলেও আর্থিক দিক থেকে এখনও তারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের চ্যালেঞ্জের মুখে। কে শীর্ষে থাকবে আগামী বছরগুলোতে—তা নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ পারফরম্যান্স, তরুণ প্রতিভার বিকাশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ধারাবাহিকতার ওপর।
মন্তব্য করুন