লিওনেল মেসি আপনার জন্মদিন ফুটবলবিশ্বের অন্যতম বৃহৎ উৎসবের উপলক্ষ হতে পারে। তবে আপনার জন্মদিনে আমি খুশি হতে পারি না, হাসতে পারি না। বুকের মধ্যে একটা হাহাকার, শূন্যতা কাজ করে। বারবার শুধু মনে হয় আরও একটি বছর চলে গেল। সময়ের কাটা যেন জানাতে চায়, বুড়িয়ে যাচ্ছেন মেসি, ফুরিয়ে যাচ্ছে বেলা।
চোখ মেলে আর খুব বেশি দিন দেখা হবে না ফুটবল আর মাঠে বাঁ পায়ের ওই জাদুর খেলা। তবুও মনের কোণে কোথায় যেন একটু মোচড়ে ওঠে, আক্ষেপের গলায় উঠে আসে একটাই স্বর—ইশ! সময়টা কি বেঁধে রাখা যায় না?
মেসির জন্মদিন মানেই লাখো কোটি মানুষের কতশত পাগলামি, আয়োজন, হাসি-খুশির উপলক্ষ। কত সুন্দর করেই না অনেকে তাদের ভালোবাসার কথা লিখে কিংবদন্তিদেরও কিংবদন্তি মেসির জন্য। তবুও একদল থাকে, যারা নিজেদের ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে আর বলে উঠতে পারে না। গুছিয়ে নিজের ভালোবাসার কথাটা বলতে পারে না। এমনিতে মুখে কতই না খই ফোটে;
কিন্তু মেসিকে নিয়ে বলতে গেলেই যেন কেমন হারিয়ে যায়! হারায় না শুধু ভালোবাসা, এক অপার্থিব নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর নিছকই পাগলামির গল্প। না বলা সেই প্রেমিকের অব্যক্ত চিঠিতেই জমা পড়ে থাকা কত শতসহস্র বছরের ভালোবাসার গল্প। মেসির জন্মদিনে তাদের মনে থাকে একরাশ কষ্ট। অদেখা, অজানা, অপরিসীম ভালোবাসা হারানোর ভয়!
গত দশকের শুরু থেকে পুরো বিশ্বকে নিজের বাঁ পায়ের জাদুতে নাচিয়েছেন মেসি। টানা চারটি ব্যালন ডি’অর, ছয় বছরে তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, এক সিজনে ৯১ গোল, ফলস নাইন আর রাইট উইংয়ে দাপট, সব মিলিয়ে উড়তে থাকা মেসির ভক্ত না হয়ে পারা যায়? তবে এত পরিসংখ্যান, রেকর্ড ছাড়াও মেসি হয়তো মেসিই থাকতেন।
কেননা ওই একই সময়ে মেসি দেখেছেন ব্যর্থতার চূড়ান্ত শিকড়। টানা তিনটি ইন্টারন্যাশনাল ফাইনাল হারার পর যখন অভিমানে রিটায়ারমেন্টে গেলেন তখন তিনি হয়ে গেলেন ন্যাশনাল ফেইলর, ক্লাব লিজেন্ড, সিস্টেম প্লেয়ার। দুঃসময়ে নাকি ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়! কই? সফল মেসির থেকে তো অভাগা মেসির পাশেই ছিল কোটি কোটি ভক্তের ভালোবাসা আর প্রার্থনা। মেসিও আসলে দুই হাত না, দুই পা দিয়েই দিয়েছেন সেই ভালোবাসার প্রতিদান। নিজের কষ্ট লুকিয়ে হাসির ফোয়ারা এনে দিয়েছেন কোটি মুখে। হাজারো সমালোচনা, ট্রলকে যিনি খুব অনায়াসেই ড্রিবল করে এগিয়ে গেছেন।
কষ্টগুলো যেন রিয়াল মাদ্রিদের রামোস, পেপের মতো বারবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আঘাত করেছে, ব্যথা দিয়েছে তবে থামিয়ে রাখতে পারেননি। দুপায়ের জাদুতে এঁকিয়ে বেঁকিয়ে ক্যাসিয়াসকে টপকে বলকে জড়িয়ে দিয়েছেন জালে। মেসির সবচেয়ে পাঁড় সমালোচকও হয়তো একবার বলে ওঠেন—প্লেয়ার বটে একটা! শুধু মেসির সমালোচনা করার জন্য খেলা দেখতে বসে কতশত জন যে বনে গেছে ডাই হার্ড ফ্যান, তার হিসাব কেই বা রেখেছে কবে? যে খেলোয়াড়টার মোরালটা অবধি ভাঙা হয়েছিল নিজ দেশে, তার জন্যই কি না রাস্তায় নেমে এসেছিল গোটা দেশ। কোটি মানুষের প্যারেডে উচ্চারিত হয়েছে একটাই নাম—মেসি, মেসি।
যার নেতৃত্বের গুণাবলি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিজ দেশের ফুটবল ঈশ্বর খোদ ম্যারাডোনা, সেই মেসির জন্য তার টিমমেটরা যুদ্ধে অবধি যেতে চান। তার জন্মদিনে গিফট করতে চান শিরোপাটাই। যার এক ইশারায় চলে পুরো একটা দল। যার সফলতা অবধি হেটারসদের কাছে তা মনে হয় অর্জন করা অসম্ভব। হয় তিনি চুরি করেছেন, নাহলে কেউ দান করেছে।
মেসি আপনার উত্থান দেখেছি, পতন দেখেছি, ফের সাফল্যের শিকড়ে উঠতেও দেখেছি। আপনাকে কাঁদতে দেখেছি, হাসতে দেখেছি, হাসাতে দেখেছি। কিন্তু এই দেখার শেষটা দেখতে চাই না। আপনি কিছু বছর পর আর খেলবেন না, তা কেন মেনে নিতে পারি না! আপনার জন্মদিন তাই আমার মনে ভয় ধরায়, কষ্ট দেয়। তবুও বুকে পাথর চেপেই শুভেচ্ছাটা জানাতে হয়, শুভ জন্মদিন লিওনেল মেসি। কালবেলার পক্ষ থেকে শুভকামনা। আপনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন আমাদের হাজারো অব্যক্ত অনুপ্রেরণা আর ভালোবাসার গল্পে।
মন্তব্য করুন