

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর আলোয় যখন এল ক্লাসিকোর মঞ্চে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল মুখোমুখি, তখন প্রত্যাশা ছিল হান্সি ফ্লিকের বার্সেলোনার গত মৌসুমের মতো আধিপত্য বজায় রাখার। কিন্তু বাস্তবে যা হলো, তা ছিল রিয়াল মাদ্রিদের পুনর্জাগরণের এক চিত্র—নিপুণ, সংগঠিত ও ক্ষুধার্ত এক দল যেন নিজেদের ঋণ শোধ করল। জাবি আলোনসোর মাদ্রিদ প্রথমার্ধেই ম্যাচের ছন্দ ঠিক করে দেয়, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও জুড বেলিংহ্যামের গোলের ঝলকে বার্সাকে প্রায় অচল করে দেয় তারা।
ফ্লিকের বার্সা শুরুতে বল দখলে শ্রেষ্ঠত্ব দেখালেও কার্যকর কিছু তৈরি করতে পারেনি। বল ঘুরছে, পাস হচ্ছে, কিন্তু হুমকি নেই। বিপরীতে, আলোনসোর মাদ্রিদ যেন প্রতিটি আক্রমণেই তৈরি করছে বিস্ফোরণ। শুরুতেই বিতর্ক ওঠে—দুই মিনিট না পেরোতেই ভিনিসিয়ুসের পেনাল্টি দাবিতে ভিএআরের হস্তক্ষেপে রেফারি সিদ্ধান্ত পাল্টে দেন। কিন্তু সেই হতাশা বেশিক্ষণ টিকেনি। ফার্মিনের বল হারানোর সুযোগ নিয়ে গুলের পাস থেকে এমবাপ্পে যে শটে জাল কাঁপান, সেটিও সামান্য অফসাইডে বাতিল হয়। তবে পরেরবার আর কোনো ভুল করেননি ফরাসি তারকা—বেলিংহ্যামের নিখুঁত ক্রস থেকে দারুণ ফিনিশে মাদ্রিদ এগিয়ে যায়।
প্রথমার্ধ জুড়ে মাদ্রিদের আধিপত্য ছিল সম্পূর্ণ। বেলিংহ্যাম, ভিনিসিয়ুস, এমনকি তরুণ হুইজেন—সবাই ছন্দে ছিলেন। বল ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, দ্বিতীয় বলের দখল, অফসাইড ট্র্যাপের নিখুঁত ব্যবহার—সব মিলিয়ে মাদ্রিদের ফুটবলে ছিল শৃঙ্খলা ও গতির এক সমন্বয়। অন্যদিকে, বার্সার ভরসা হয়ে দাঁড়ান কেবল গোলরক্ষক সেজনি, যিনি একের পর এক সেভে দলকে ভাসিয়ে রাখেন।
অবশ্য বার্সা প্রথমার্ধে শুরুতে বার্সা কিছুটা ফিরে আসে, আর্দা গুলের এক ঘুমন্ত ভুলে বল কাড়েন পেদ্রি, সেখান থেকে রাশফোর্ড-বালদে মিলিয়ে ফার্মিন গোল করে সমতায় ফেরান দলকে। কিন্তু আনন্দটা স্থায়ী হয়নি। মিনিট পাঁচেক পরই ভিনিসিয়ুসের ক্রস থেকে মিলিতাওয়ের হেড, আর বেলিংহ্যামের ট্যাপে আবারও এগিয়ে যায় মাদ্রিদ। সেই জায়গা থেকে বার্সা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধে ভিএআর আবারও আলোচনায় আসে, এবার এরিক গার্সিয়ার হ্যান্ডবলে পেনাল্টি পায় মাদ্রিদ। কিন্তু এখানেই নায়ক হয়ে ওঠেন সেজনি—এমবাপ্পের শট ঠেকিয়ে রাখেন অসাধারণভাবে। এই মুহূর্তে বার্সা কিছুটা প্রাণ ফিরে পেলেও, মাঝমাঠে টচুয়ামেনি ও কামাভিঙ্গার নিয়ন্ত্রণে হারিয়ে যায় তাদের গতি।
শেষদিকে বার্সা আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে—লামিনে ইয়ামালকে সামনে ঠেলে দেন ফ্লিক, এমনকি আরাউহোকে পাঠান ‘ফলস নাইন’-এর ভূমিকায়। কিন্তু বেঞ্চে বিকল্প না থাকায় চাপ বাড়লেও গোল আসেনি। বিপরীতে, ভিনিসিউসের বদলি নিয়ে নাটক হয়—ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সরাসরি ড্রেসিংরুমে চলে যান, পরে ফিরে এলেও তার সেই আচরণ দলীয় ঐক্যে প্রশ্ন তোলে।
শেষ বাঁশির আগে উভয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ধস্তাধস্তি, উত্তেজনা ছড়ায় গ্যালারিতেও। ম্যাচ শেষে পরিষ্কার—এই ক্লাসিকো শুধু জয় নয়, ছিল এক মানসিক যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে বিজয়ী হলো জাবি আলোনসোর মাদ্রিদ, যারা এবার শুধু কার্যকর নয়, দৃষ্টিনন্দনও।
পাঁচ পয়েন্টের ব্যবধানে এখন লা লিগার শীর্ষে তারা। অন্যদিকে, ফ্লিকের বার্সার জন্য এটি এক তীব্র সতর্কতা—বল দখলই সব নয়, মুহূর্তের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করে শ্রেষ্ঠত্বের মানচিত্র।
মন্তব্য করুন