

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সায়মা হোসেন (২২) নামে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
তারা অভিযোগ করেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়—বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শারীরিক শিক্ষা বিভাগ ও মেডিকেল সেন্টারের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই সায়মার মৃত্যু হয়েছে।
শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোসা. রোখসানা বেগম প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন, সায়মার মৃত্যু “হার্ট অ্যাটাক”-এর কারণে হতে পারে। তবে শিক্ষার্থীরা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসজুড়ে মিছিল বের করেন।
এরপর রাত ৯টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তারা প্রশাসনের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের অবহেলার বিচার না হলে শিক্ষার্থীদের জীবন আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
রাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, আমরা দীর্ঘক্ষণ ধরে আন্দোলন করছি, কিন্তু প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধি এসে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেনি। প্রতিবারই প্রশাসন এমনভাবে সময়ক্ষেপণ করে। শিক্ষার্থীদের কষ্ট, ক্ষোভ ও শোককে তারা তুচ্ছ করে দেখছে। আমরা এখান থেকে বিচার নিশ্চিত না করে ফিরব না ইনশাআল্লাহ।
রাকসুর সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, একজন শিক্ষার্থী সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে—তাহলে তার ফিটনেস টেস্ট করা হয়নি কেন? শারীরিক শিক্ষা বিভাগ কীভাবে একজন শ্বাসকষ্টের রোগীকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অনুমতি দিল? সুইমিংপুলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কোথায় ছিলেন, যখন একজন শিক্ষার্থী আধা ঘণ্টা ধরে পানিতে নিস্তেজ অবস্থায় ছিলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর প্রশাসনকেই দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রাবি মেডিকেল সেন্টারের অব্যবস্থাপনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে আধমরা অবস্থায় রামেকে পাঠানো হয়েছিল। আজও সায়মাকে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেনি তারা। সায়মার মৃত্যুকে আমরা ‘দুর্ঘটনা’ নয়, অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখছি। আমরা অবিলম্বে স্বচ্ছ তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সেখানে ফরিদ সাহবকে (উপ-উপাচার্য) রাখা হয়েছে যাতে কোনো গড়িমসি না হয়। তারা ৭২ ঘন্টার মধ্যে একটা প্রাথমিক রিপোর্ট দিবেন। সেটা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।
মন্তব্য করুন