ব্রাজিলের বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে সেরা তারকা। মাঠে যার উপস্থিতি দলের সক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল নেইমারকে অভাবটা বেশ ভালোভাবেই মিস করবে।
১২৮ ম্যাচে তার গোল ৭৯টি। বর্তমানে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। আর বর্তমানে ব্রাজিল দলের পুরো স্কোয়াডের গোল সংখ্যা ৪২।
রাজপুত্র-এই নামের ট্যাগটি নেইমারকে তার পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে অনুসরণ করেছে। কিন্তু ক্লাব ফুটবলের সাফল্য আর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ঘাটতি, অসন্তোষ তৈরি করেছে ব্রাজিলিয়ানদের মাঝে।
ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোস ছেড়ে নেইমার যোগ দেন বার্সেলোনায়। ২০১৩ সালে সিনিয়র ফুটবলে প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি কনফেডারেশন কাপ জিততে ফিরে আসেন ব্রাজিলে।
বার্সেলোনায় দ্বিতীয় মৌসুমি স্প্যানিশ লা লিগা এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জেতেন নেইমার। ইউরোপ সেরার মঞ্চে জুভেন্তাসের বিপক্ষে শেষ গোলটি করেছিলেন তিনি। ঘরোয়া ট্রফির ভিড়ে, মহাদেশীয় এবং আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতা হয়নি নেইমারের।
Work pic.twitter.com/eWADi5k2dL — Neymar Jr (@neymarjr) June 13, 2024
২০১৪ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার জুয়ান জুনিগার হাঁটু দিয়ে তার পিঠে আঘাত করেন। এতে ছিটকে যান স্কোয়াড থেকে। তার অনুপস্থিতিতে সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। ২০১৫ সালে চিলিতে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়ের কাছে টাইব্রেকে হেরে যায় সেলেসাওরা। সেবার পুরো আসরে নেইমার গোল করেছিলেন মাত্র একটি।
পরের বছর ইনজুরির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া কোপা আমেরিকার শতবার্ষিকী আসরে খেলার সুযোগ হয়নি তার। এর পরিবর্তে ব্রাজিল হওয়া অলিম্পিক গেমসে অংশ নেন তিনি।
ঘরের মাঠে জার্মানিকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জেতে ব্রাজিল। এটিই নেইমারের একমাত্র আন্তর্জাতিক সাফল্য। ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি ২০১৯ সালে কোপা আমেরিকা। ফলে ব্রাজিল কোপার ট্রফি জিতলে, শিরোপা উৎসব করা হয়নি তার।
২০২১ সালে মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট জয়ের সুযোগ ছিল নেইমারের। সেবার নক আউট পর্বে গোল পাননি তিনি। ঐতিহাসিক মারাকানায় ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ গোলে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় ব্রাজিল ও নেইমার।
২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে উরুগুয়ের বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়েন তিনি। কাজেই খেলা হচ্ছে না ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকা। মহাদেশীয় এই ট্রফি জিততে তাকে অপেক্ষা করতে হবে আরো চার বছর। সে সময় তার বয়স হবে ৩৬।
এই বয়সে এসে প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি জয় করা কতটা সম্ভব তা সময় বলে দেবে! এ ছাড়া ইনজুরির সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে নেইমারের। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তার ইনজুরির প্রবণতা।
২০২৮ সালে কোপা আমেরিকা কোথায় আয়োজিত হবে তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। কোপার পরে আসর আয়োজনের আগ্রহ দেখাচ্ছে ব্রাজিল। ঘরের মাঠে সমর্থকদের সমর্থন, নেইমারের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের পথ আরও প্রসারিত করতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে নেইমার অনুপ্রাণিত হতে পারেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে দেখে। ক্লাব ফুটবলের সম্ভাব্য সব ট্রফি জিতলেও তার জেতা হচ্ছিল না কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি। অবশেষে কোপা এবং বিশ্বকাপ দুটি জিতেছেন আজেন্টাইন কিংবদন্তি। ‘রাজপুত্র’ থেকে রাজা হয়ে ফিরেছিলেন নিজ দেশে।
বার্সেলোনা ও পিএসজির সাবেক সতীর্থ মেসি-নেইমারের বন্ধুত্ব অনেক দিনের। বন্ধুর কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন কীভাবে রাজপুত্র থেকে রাজা হওয়া যায়। আর আন্তর্জাতিক ট্রফি না জিতলে নেইমার কিন্তু ব্রাজিলিয়ানদের কাছে রাজপুত্র হয়েই থাকবেন। মেসির মতো রাজা হতে পারবেন না।
মন্তব্য করুন