বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর সেই সংশোধনী প্রস্তাবে নির্বাহী কমিটিতে সরকারের দুই প্রতিনিধির পদ বাতিলের পাশাপাশি পাঁচ সহসভাপতির স্থানে তিন এবং তিন উপমহাসচিবের সংখ্যা কমিয়ে দুজনে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিওএর সাধারণ পরিষদে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধনের লক্ষ্যে বিওএ সংশ্লিষ্টদের কাছে খসড়া গঠনতন্ত্র এরই মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) চার্টারের আলোকে ২০০০ সালে অনুমোদিত বিওএ গঠনতন্ত্রে নির্বাহী কমিটিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) একজন করে প্রতিনিধি রাখার বিধান আছে। যদিও গঠনতন্ত্র প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, ক্রীড়া প্রশাসনের সরকারি হস্তক্ষেপ কমাতেই এমন উদ্যোগ। যদিও এতদিন তাদের অবস্থানে কোন সরকারি হস্তক্ষেপ না হওয়ার পরও হঠাৎ করে সরকারি কর্মকর্তাদের বাদ দেওয়ার বিষয়টি সন্দেহের চোখেই দেখছেন অনেকেই। কারণ কালবেলার কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে আইওসির পক্ষ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান বিওকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন অলিম্পিক সনদের সঙ্গে সংগতি রেখে ‘ক্রীড়া সংস্থা এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে গঠনমূলক অংশীদারত্বকে উৎসাহিত করা উচিত। সেই ই-মেইল বার্তায় সরকারি এবং বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককেও উৎসাহিত করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে দুই প্রতিনিধিকে ছেঁটে ফেলতে যথারীতি ‘আইওসি’ নামে হাইকোর্ট দেখানো হচ্ছে! নির্বাহী কমিটিতে সরকারি প্রতিনিধি বাদ দিয়ে খসড়া গঠনতন্ত্রে বলা হচ্ছে, প্রয়োজনে সভাপতি জাতীয় অলিম্পিক একাডেমি, এনএসসি কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার প্রতিনিধিকে নির্বাহী কমিটির সভায় আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অতিথি হিসেবে ওই প্রতিনিধিদের ভূমিকা বিওএর সিদ্ধান্তে কার্যকারিতা পাবে না।
বর্তমান গঠনতন্ত্রে পাঁচ সহসভাপতির তিনজন অলিম্পিক ইভেন্ট থেকে, একজনকে মহিলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে থাকতে হবে—উল্লেখ করা হলেও অপর পদের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্রের ১৬.১.২-এ বলা আছে, তিন সহসভাপতির দুজন থাকতে হবে অলিম্পিক ইভেন্টভুক্ত ফেডারেশন থেকে, অন্যটিতে কাউন্সিলরদের মধ্যে যে কেউ আসতে পারবেন। পাঁচ থেকে সহসভাপতি পদ কমিয়ে ৩টি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান গঠনতন্ত্রের আর্টিক্যাল-১৫-এর ‘ডি’-তে বলা আছে, তিন উপমহাসচিবের দুজন অলিম্পিক ইভেন্টভুক্ত ফেডারেশন থেকে থাকবে। অপর পদের জন্য কিছু বলা নেই। তবে প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্রের ১৬.১.৪-এ বলা আছে অন্তত একজন থাকবেন অলিম্পিক ইভেন্ট থেকে; অপর পদে নন-অলিম্পিক ইভেন্ট থেকে থাকতে পারবেন।
বর্তমান গঠনতন্ত্রে নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ৩৭। সেখানে নির্বাচিত পদ সংখ্যা ২৬। বাকি ১১ পদে বিওএ সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং দপ্তর থেকে নেওয়া হয়। প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা কমিয়ে ২৩ করার কথা বলা হয়েছে। নির্বাহী কমিটির ১১ সদস্য অলিম্পিক ইভেন্টভুক্ত ফেডারেশন থেকে হবেন, যার তিনজন থাকবেন নারী প্রতিনিধি। আর মনোনীত সদস্য পদে দুজনের একজন হবে অলিম্পিয়ান, অপরজন অ্যাথলেট কমিশন মনোনীত।
গঠনতন্ত্রে প্রস্তাবিত পরিবর্তন নিয়ে বিওএ বর্তমান নির্বাহী কমিটির সদস্য সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর কালবেলাকে বলেন, এই প্রস্তাবের দুটি দিক রয়েছে। একটি আইওসির গাইডলাইন, অপরটি আমাদের দেশের বাস্তবতা। যা করার তা এই দুটি বিষয়ের সমন্বয় করেই করতে হবে। আর প্রস্তাবিত পরিবর্তন হবে কি হবে না, সেটিও সময় বলে দেবে।’
মন্তব্য করুন