ক্লান্তি বা অবসাদ দূর করার অন্যতম পানীয় চা, যা বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয়। পাড়াগায়ের টং দোকান থেকে শুরু করে নামিদামি তারকা মানের হোটেল, এমনকি বাসাবাড়িতেও চায়ের জুড়ি নেই। এমন অবস্থা হয়েছে যে চা ছাড়া চলেই না। শত শত বছর ধরে চা পান করে আসছেন মানুষ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চা নিয়ে হয়েছে গবেষণা, যোগ হয়েছে নানান ধরন।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৭ পদের চা সম্পর্কে জেনে নিই।
দা-হং পাও চা বিশ্বের সবচেয়ে দামি চায়ের তালিকার শীর্ষে যে নামটি আসবে, সেটি হলো চীনের দা-হং পাও চা; যা চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের উয়ি পর্বতমালায় উৎপাদিত হয়। এই চায়ের মূল্য কেজিপ্রতি ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। বিরল প্রজাতির এই চাকে চীনের জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পান্ডা ডাং চা তালিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামের চা হলো পান্ডা ডাং চা, যা চীনে উৎপাদিত হয়। পান্ডা ডাং চা চাষে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয় পান্ডা ভালুকের গোবর। এই চা সর্বপ্রথম চাষ করেছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের উদ্যোক্তা আন ইয়ানশি। জৈব সার হিসেবে পান্ডার গোবর ব্যবহার শুরু করেন এই চা চাষি। আন ইয়ানশি প্রথমবার ৫০ গ্রাম চা প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ডলারে বিক্রি করেন। উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত পান্ডা ডাং চা খুবই উপকারী। বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার ডলারে বিক্রি হয় পান্ডা ডাং চা।
ইয়েলো গোল্ড টি বাডস চা সিঙ্গাপুরের ইয়েলো গোল্ড টি বাডস তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে, যার এক কেজি চা পাতার দাম ৭ হাজার ৮০০ ডলার। চীনের সম্রাটদের চা নামে পরিচিত এই চা বর্তমানে সিঙ্গাপুরের টিডব্লিউজি চা কোম্পানি বিক্রি করে থাকে। বিলাসবহুল ও বিরল এই চায়ের কুঁড়ি বছরে একবারই সংগ্রহ করা হয়ে থাকে, যা কাটতে ব্যবহার করা হয় স্বর্ণের কাঁচি। রোদে চা পাতা শুকানোর পর ভোজ্য ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ ফ্লেক্স দিয়ে স্প্রে করা হয় বলেও জানা যায়।
সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল চা ভারতের দার্জিলিংয়ের সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল চা কেবল পূর্ণিমার রাতে দক্ষ শ্রমিকদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এটি দার্জিলিংয়ের ঢালু পাহাড়ের মাকাইবাড়ি চা স্টেটে কাটা এক ধরনের ওলং চা, যা বিশেষ কুঁড়ি থেকে আসে। দেখতে রুপালি সুইয়ের মতো, যার রয়েছে দারুণ স্বাদ ও সূক্ষ্ম ফলের সুগন্ধ। জানা যায়, ২০১৪ সালের এক নিলামে ১ হাজার ৮৫০ ডলারে বিক্রি হয় এক কেজি সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল চা। এটি ছিল ভারতের সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চা।
গিয়োকুরো চা জাপানে যেসব গ্রিন টি পাওয়া যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানের চা হলো গিয়োকুরো। জাপানের উজি জেলায় চাষ হয় এটি। কাটার প্রক্রিয়া হিসেবে সেরা চা পাতা বাছাই করার আগে চার সপ্তাহের জন্য খড়ের ম্যাটের ছায়ায় রাখতে হয় এই চা। এই প্রক্রিয়া উদ্ভিদকে এল-থিয়ানিন অ্যামিনো অ্যাসিড ধরে রাখতে সহায়তা করে, যা চায়ের স্বাদ বাড়িয়ে তোলে। ষষ্ঠ কাহেই ইয়ামামোতো ১৮৩৫ সালে গিয়োকুরো চা প্রথম আবিষ্কার করেন। এক কেজি গিয়োকুরো চায়ের বাজারমূল্য প্রায় ৬৫০ ডলার।
টিগুয়ানিন চা বিশ্বের সর্বাধিক প্রশংসা পাওয়া চায়ের একটি টিগুয়ানিন চা, যা চীনে পাওয়া যায়। এটি এক ধরনের ওলং চা, যা বৌদ্ধ দেবতার সম্মানে নামকরণ করা হয়। বৌদ্ধ দেবতা গুয়ান ইন লৌহ দেবী হিসেবেও পরিচিত। এই চা পাতায় নিজস্ব বাদামের স্বাদ ও ফুলের সুগন্ধিযুক্ত। টিগুয়ানিন চা চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের উঁচু অঞ্চলে উৎপন্ন হয়। এর পাতা উজ্জ্বল সোনালি রঙের হওয়া পর্যন্ত রোদে শুকানো হয়। প্রতি কেজি প্রায় ৩ হাজার ডলারে টিগুয়ানিন চা বিক্রি হয়।
ভিনটেজ নার্সিসাস চা নার্সিসাসের গ্রিক কিংবদন্তির নামানুসারে ভিনটেজ নার্সিসাস চায়ের নামকরণ করা হয়েছে। এটি একটি বিরল ওলং চা, যা চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের উয়ি পর্বতমালা ও তাইওয়ানের পিংলিন চা অঞ্চলে উৎপন্ন হয়। এই চায়ের তীব্র সুগন্ধ রয়েছে, যা কেজিপ্রতি প্রায় ৬ হাজার ৫০০ ডলারে বিক্রি হয়।
মন্তব্য করুন