বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণভাবে পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই প্রতিদিন সমান পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন- প্রায় ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, মহিলাদের শরীরে হরমোনের ওঠানামা ঘুমে বেশ বড় প্রভাব ফেলে।
ঘুম আমাদের সবার জন্যই জরুরি। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের কি সত্যিই বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়?
গবেষণা বলছে, যদিও ঘুমের চাহিদা দুই লিঙ্গেই প্রায় একই, তবুও মহিলারা ঘুমের ব্যাঘাত বা সমস্যা বেশি অনুভব করেন। এর পেছনে রয়েছে বিভিন্ন জৈবিক, হরমোনজনিত ও সামাজিক কারণ, যা ঘুমের ধরনকে প্রভাবিত করে।
আরও পড়ুন : ঘরে বসে সহজ পদ্ধতিতে কিডনির পরীক্ষা করতে পারবেন
আরও পড়ুন : মাথাব্যথার যত ধরন
এই পার্থক্যগুলো বোঝা জরুরি, যাতে ঘুম সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করা যায় এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ঘুমের মান উন্নত করা যায়।
বর্তমান গবেষণা অনুযায়ী, মহিলাদের প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম দরকার। তবে কেউ যদি ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাহলে তার ওবেসিটি (অতিরিক্ত ওজন) ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
তবে দুঃখজনকভাবে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৩০% মানুষ এই নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঘুমাতে পারেন না। এমনকি যারা সাধারণত ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমান বলেও জানান, তাদের ৪০% রাতেই এই সময়সীমার বাইরে ঘুম হয়। সপ্তাহে মাত্র ১৫% মানুষই ৫ দিনের বেশি নির্ধারিত সময়মতো ঘুমাতে সক্ষম হন।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মহিলারা সাধারণত পুরুষদের চেয়ে একটু বেশি ঘুমান, কিন্তু তারা ঘুমের মান ও নিয়মিততা ঠিক রাখতে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন।
পুরুষ ও মহিলাদের ঘুমের প্রয়োজন প্রায় একই হলেও, হরমোনের তারতম্য বিশেষ করে ইস্ট্রাডিওল (oestradiol) ঘুমের গুণগত মান ও কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।
এই হরমোনগুলো ঘুমের গভীরতা ও ঘুম-জাগরণের সময়কে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে বিভিন্ন জীবন পর্যায়ে যেমন-
- কৈশোর (puberty)
- মাসিকের সময়
- গর্ভাবস্থা
- মেনোপজের আগের সময় (perimenopause)
- মেনোপজ
এসব সময়ে নারীদের ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মাসিক চক্রের বিশেষ করে প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সময়ে ঘুম আসতে সমস্যা হয়। গর্ভাবস্থায় হরমোন পরিবর্তনের ফলে ক্লান্তি, ঘন ঘন প্রস্রাব, পায়ে ঝিনঝিনি (RLS) এবং নিঃশ্বাসজনিত সমস্যা হতে পারে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
মেনোপজ ও পেরিমেনোপজে ঘাম হওয়া, গরম লাগা (hot flashes) ইত্যাদির ফলে রাতের ঘুম নষ্ট হয়।
একটি ২০২০ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, মহিলারা পুরুষদের তুলনায় ৫৮% বেশি ইনসমনিয়ায় (ঘুম না আসা) ভোগেন। ঘুম ঠিকমতো না হওয়ায় অনেক সময় তারা অতিরিক্ত ঘুমিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করতে চান।
আরও গবেষণায় বলা হয়েছে, মহিলারা পুরুষদের তুলনায় বেশি ঘুমের সমস্যা যেমন RLS (restless leg syndrome) ও স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভোগেন। ফলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেতে তাদের ঘুমের সময়ও বেশি হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সন্তান জন্মের পর নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে ৪২ মিনিট কম ঘুমান। বিশেষ করে নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে এই ঘুমের ঘাটতি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে।
বয়স অনুযায়ী ঘুমের প্রয়োজন (CDC-এর মতে):
জন্ম–৩ মাস : ১৪-১৭ ঘণ্টা
৪-১১ মাস : ১২-১৬ ঘণ্টা
১-২ বছর : ১১-১৪ ঘণ্টা
৩-৫ বছর : ১০-১৩ ঘণ্টা
৬-১২ বছর : ৯-১২ ঘণ্টা
১৩-১৮ বছর : ৮-১০ ঘণ্টা
১৮-৬৪ বছর : ৭-৯ ঘণ্টা
৬৫ বছর বা তার বেশি : ৭-৮ ঘণ্টা
নিয়মিত ঘুমের রুটিন রাখুন : প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যান ও উঠুন- এমনকি ছুটির দিনেও।
ঘুমানোর পরিবেশ ঠিক রাখুন : ঘর যেন শান্ত, অন্ধকার ও আরামদায়ক হয়। দরকারে ব্ল্যাকআউট পর্দা ও ভালো ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন।
খাবার ও পানীয়ে সচেতন থাকুন : ঘুমের ৩ ঘণ্টা আগে খাওয়া বন্ধ করুন, দেরিতে চা-কফি খাবেন না এবং ঘুমের আগে অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
স্ক্রিন টাইম কমান : ঘুমের অন্তত ২ ঘণ্টা আগে মোবাইল/টিভি স্ক্রিন দেখা বন্ধ করুন।
ঘুমানোর আগে আরামদায়ক কিছু করুন : উষ্ণ গোসল, বই পড়া, মেডিটেশন বা ডিপ ব্রিদিং ঘুমে সাহায্য করে।
ব্যায়াম করুন : দিনের বেলায় ব্যায়াম করলে ঘুম ভালো হয়, তবে ঘুমের ঠিক আগে নয়।
ডাক্তারের পরামর্শ নিন : যদি ঘুমের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
পুরুষ ও মহিলার ঘুমের প্রয়োজন প্রায় সমান হলেও, মহিলাদের শরীরে হরমোন পরিবর্তন, সন্তান পালন ও সামাজিক দায়িত্বের কারণে ঘুমের গুণগত মানে পার্থক্য দেখা দেয়। এসব কারণে তারা ঘুমের সমস্যায় বেশি ভোগেন।
আরও পড়ুন : প্রচণ্ড মাথাব্যথা দূর করতে যা করবেন
আরও পড়ুন : থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন, বুঝবেন যেসব লক্ষণে
তাই ঘুম নিয়ে সচেতন হওয়া, নিজের শরীরের প্রয়োজন বুঝে ঘুমানো এবং ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা- সবই, বিশেষ করে নারীদের জন্য-অত্যন্ত জরুরি।
সূত্র : হেল্থ লাইন
মন্তব্য করুন