আপনার কি কিছুদিন ধরে সবসময় অস্থির লাগছে, হঠাৎ মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে, খুব খাচ্ছেন বা খুবই কম খাচ্ছেন কিন্তু ওজন কমছে বা বাড়ছে না কিংবা বুক ধড়ফড় করছে? এগুলোকে আমরা অনেক সময় দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ বা ঘুম কম হওয়ার ওপর চাপিয়ে দিই।
কিন্তু জানেন কি, এর পেছনে থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা লুকিয়ে থাকতে পারে? বিশেষ করে যখন থাইরয়েড হরমোন শরীরে বেশি তৈরি হয় তখন অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেয়, যা আমরা সচরাচর গুরুত্ব দিই না।
চলুন আজ জেনে নিই, কোন লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন আপনার থাইরয়েড হরমোন অতিরিক্ত নিঃসৃত হচ্ছে এবং এখনই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার সময়।
আপনি প্রচুর খাচ্ছেন, কিন্তু ওজন দিন দিন কমে যাচ্ছে? এটি হতে পারে থাইরয়েড হরমোন বেশি হওয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ। এই হরমোন বিপাক হার বাড়িয়ে দেয়, ফলে শরীর বেশি ক্যালোরি পুড়িয়ে ফেলে।
বিশ্রামে থাকলেও যদি হঠাৎ বুক ধড়ফড় করতে থাকে, হার্টবিট লাফালাফি করে- তবে এটি হতে পারে থাইরয়েড হরমোনের প্রভাব। একে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়, কারণ এটি বড় ধরনের হার্ট সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
ছোট ছোট ব্যাপারেও রাগ উঠে যাচ্ছে বা অস্থির লাগছে? এই মানসিক পরিবর্তনগুলোর পেছনে হরমোনের হাত থাকতে পারে।
স্বাভাবিক আবহাওয়াতেও যদি গরম লাগে বা অল্পেই ঘেমে যান, তাহলে সতর্ক হোন। এটি থাইরয়েড অতিসক্রিয়তার পরিচয় হতে পারে।
আপনি হয়তো লক্ষ্য করছেন- হাত কাঁপছে, আর মন বসছে না কোনো কাজে। এসবই হতে পারে হরমোনের কারণে স্নায়ু অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়ায়।
গলার নিচে অস্বাভাবিক ফোলা ভাব বা চাপ লাগার অনুভূতি থাকলে তা হতে পারে গলগণ্ড। এই লক্ষণ একেবারেই অবহেলা করা ঠিক নয়।
চোখ শুকিয়ে যাওয়া, চুলকানো বা এমনকি একটু উঁচু হয়ে আসা- এসব লক্ষণ গ্রেভস ডিজিজ নামের একটি অটোইমিউন সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে, যা থাইরয়েডের সঙ্গে সম্পর্কিত।
থাইরয়েড হরমোন হজমের গতি বাড়িয়ে দেয়, ফলে বেশি পায়খানা হতে পারে বা পাতলা পায়খানার ঝুঁকি বাড়ে।
আপনি যেন সারাক্ষণ দৌড়ের মধ্যে আছেন, কিন্তু তবুও চরম ক্লান্ত লাগছে? এটা পেশি দুর্বলতার কারণেও হতে পারে, যা হরমোন অতিরিক্ত হলে হয়।
চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে ভ্রুর পাশের চুল? অথবা ত্বক নরম, মসৃণ কিন্তু অতিরিক্ত ঘামছে? এই পরিবর্তনগুলোও থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণ।
উপরের যে কোনো কয়েকটি লক্ষণ যদি একসঙ্গে দেখা দেয়- বিশেষ করে ওজন কমে যাওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, মানসিক অস্থিরতা বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি- তবে দেরি না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
একটি সাধারণ রক্তপরীক্ষার মাধ্যমেই থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা যাচাই করা যায়। প্রয়োজনে বিশেষ কিছু অ্যান্টিবডি টেস্টও লাগতে পারে।
মনে রাখবেন, এই লেখাটি সাধারণ তথ্যের জন্য। এটি চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। শরীরের যে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন