সন্তান ‘দত্তক’ শব্দের সঙ্গে আমরা কম-বেশি পরিচিত হলেও গাছ দত্তক নেওয়া বিষয়টি একেবারেই নতুন। কেউ সন্তান পালন করতে না পেরে কিংবা আশ্রয় দিতে না পারলে অনেকেই তার সন্তানদের দত্তক দিয়ে থাকেন আবার অনেকেই এই দত্তক নিয়ে পরিচর্যা করে সমাজে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। তবে পরিবেশ রক্ষায় গাছ দত্তক নিবে কে? গাছেদের ক্ষেত্রে তো এই আশ্রয়ের প্রয়োজনীয়তা অনেক গুণ বেশি।
সবকিছুর পরেও মানুষ মানুষের জন্য- কিন্তু গাছেদের জন্য কে? এই বোধ সবার মধ্যে থাকে না। যাদের থাকে, তারাই হন ব্যতিক্রমী। আর এই ব্যতিক্রমী অভিনব আত্মীয়তার অঙ্গীকার পালনে এগিয়ে এলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক - শিক্ষার্থীরা। পরিবেশ বাঁচাতে ১০০টি চারা দত্তক নিয়েছেন শিক্ষকরা। পাশে দাঁড়ালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও।
পশ্চিমবঙ্গজুড়ে চলতি সপ্তাহে পালিত হলো বন মহোৎসব ২০২৩। এই বন মহোৎসবে উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ক্যাম্পাসে সম্প্রতি তিন দিন ধরে গাছ লাগানো হয়। নদিয়ার মোহনপুর ডেয়ারি টেকনোলজি ক্যাম্পাসে ১০টি, ভেটেরিনারি ক্যাম্পাসে ৩৫টি, চকগড়িয়ার মৎস্যবিজ্ঞান ক্যাম্পাসে ৩০টি এবং বেলগাছিয়া ক্যাম্পাসে ২৫টি গাছ লাগানো হয়েছে। আর সেই সব গাছ দত্তক নিয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই মোট ৫০ শিক্ষক।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিম (এনএসএস) এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি চকগড়িয়া, মোহনপুর ও বেলগাছিয়া ক্যাম্পাসে বন মহোৎসব পালিত হয়। সেখানে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, আধিকারিক থেকে শুরু করে কর্মচারীদের আগ্রহ ও উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। আর সেখানেই গাছ দত্তক নেওয়ার মতো নতুন ধারণার জন্ম দিয়ে আয়োজকরা পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা দিয়েছেন। শুধু বৃক্ষরোপণে থেমে থাকলেই যে চলবে না, বরং রোপিত গাছকে সযত্নে লালনপালন করাও আমাদের দায়িত্ব— সে কথাই আর একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন তারা।
মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শ্যামসুন্দর দানা দুটি মেহগনি গাছ দত্তক নিয়েছেন। তিনি জানান, চারা দুটি সদ্য রোপণ করা হয়েছে। এর পরে সেগুলো বেড়া দিয়ে ঘেরা হবে। তিনটি ক্যাম্পাসেই দত্তক নেওয়া গাছগুলির পাশে নামফলকে সেই শিক্ষকের নাম লিখে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কথায়, ‘গাছ লাগানোর সংখ্যা না বাড়ালে আগামী প্রজন্ম ফুসফুসের রোগে বেশি করে আক্রান্ত হবে। তাই এখন থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে।’
মন্তব্য করুন