কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৩ পিএম
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সুদান নিয়ে ভয়ংকর পরিকল্পনা, বলির পাঁঠা সাধারণ মানুষ

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

সুদান এখন এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, যা একদিকে মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, আর অন্যদিকে ক্ষমতার খেলায় জড়িয়ে পড়া কিছু গোষ্ঠীকে স্বার্থ সিদ্ধির সুযোগ করে দিচ্ছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া সংঘাতটি, যা এখনো পর্যন্ত স্থায়ী কোনো সমাধান পায়নি, মূলত জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সুদানের সেনাবাহিনী এবং জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেডটির নেতৃত্বাধীন র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস-আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতা দখলের লড়াই থেকে উদ্ভূত।

এই দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ইতোমধ্যে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, আর প্রায় ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকার এই দেশটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটের মুখোমুখি। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিন নতুন নতুন শরণার্থী সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে।

এই সংঘাতে মূল লাভবান হচ্ছে সেই সামরিক নেতৃত্ব, যারা ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আল-বুরহানের সেনাবাহিনী রাজধানী খার্তুমের কিছু অংশে আধিপত্য বজায় রাখলেও, হেমেডটির আরএসএফ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা ও স্বর্ণখনির নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এই নিয়ন্ত্রণ তাদের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করছে, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দরকষাকষির জন্য বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এই সংঘাত থেকে লাভবান হচ্ছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা অভিযোগ তুলেছে। সুদানে রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসরের মতো দেশের অস্ত্র সরবরাহের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অস্ত্র বিক্রেতাদের জন্য এই যুদ্ধ যেন এক রক্তমাখা বাজার খুলে দিয়েছে। যেখানে রক্তের বিনিময়ে তারা অস্ত্রের বাজার খুলে বসেছে। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সুদান থেকে চোরাই পথে স্বর্ণ আমদানির। আর এ কাজে তাদের সবচেয়ে বড় সহযোগী জেনারেল হামদান দাগালোর নেতৃত্বাধীন আরএসএফ।

চলমান এই সংঘাতে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে সুদানের সাধারণ মানুষ। তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, খাদ্য সংকটে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে, আর হাসপাতালগুলো প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। যুদ্ধের কারণে কৃষি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটি এখন মারাত্মক খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে।

দেশটির অর্থনীতিও কার্যত ভেঙে পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে, পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় লাখো শিশুর ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে। যুদ্ধের আঘাতে সুদানের অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট, সেতু, স্কুল, হাসপাতাল সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ধর্ষণ, হত্যা, লুটপাট—সবকিছুই যেন এখন সুদানের নিত্যদিনের বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই যুদ্ধের প্রকৃত পরাজিত সুদানের সাধারণ মানুষ—যাদের জীবন এখন শুধুই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রাথমিকে ১০২১৯ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন শুরু ৮ নভেম্বর

সাতক্ষীরা-৩ আসনে ডা. শহিদুলকে মনোনয়ন না দেওয়ায় সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

হিমালয়ে ধাতব পাত্রে আটকে গেল ভালুক শাবকের মাথা, অতপর...

আইসিসি থেকে সুখবর পেলেন তানজিদ

রাজশাহী মহানগর বিএনপিতে কোনো বিভেদ নেই : মামুন

পাকিস্তানে মিলল বিশাল স্বর্ণ ভান্ডার, মজুত কতটুকু

নোয়াখালীতে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুগ্রুপের সংঘর্ষ

বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ

ফের বিপিএলে দল কিনলেন শাকিব খান

বিএনপির প্রার্থীকে গুলিবিদ্ধের ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিক্রিয়া

১০

ভারত দলে সুনীল নেই, স্কোয়াড দিল বাংলাদেশও

১১

তিন ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়েও ভারত দলে জায়গা পেলেন না শামি

১২

জুলাই মামলা নিয়ে প্রশ্ন / উত্তপ্ত এজলাস, বের করে দেওয়া হলো আইনজীবীকে

১৩

কুয়েতে বৃষ্টির জন্য নামাজের ঘোষণা

১৪

বাজারের ৬০ শতাংশ ফোন অবৈধ, জানুন আপনার ফোনের অবস্থা

১৫

প্রধান উপদেষ্টার কাছে জামায়াতসহ ৮ দল স্মারকলিপি দেবে বৃহস্পতিবার

১৬

রঙ মেশানো ১২ টন মুগডাল জব্দ, অতঃপর...

১৭

সালাউদ্দিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে বিসিবি

১৮

আইজিপির সঙ্গে আয়ারল্যান্ড ও ইইউ প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

১৯

ভেনিসে সিএসএনের উদ্যোগে ইতালিয়ান ভাষা পরীক্ষা সম্পন্ন

২০
X