কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ কেন এত ছড়িয়ে পড়ল?

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ায় সৃষ্ট দাঙ্গার মধ্য দিয়ে এশিয়ার আরেকটি দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠল। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এ দেশ। সংসদ সদস্যদের জন্য মাসিক আবাসন ভাতা অনুমোদনের খবর প্রকাশের পর থেকেই জনরোষ বিস্ফোরিত হয়। এ ভাতা দেশের ন্যূনতম মজুরির ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি, যা দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের সঙ্গে ক্ষমতাশালী রাজনীতিকদের ব্যবধান স্পষ্ট করে দিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।

রাজধানী জাকার্তায় পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় ফুড ডেলিভারি কর্মী আফফান মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভে যোগ না দিতে নয়, শুধু খাবার পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় তার মৃত্যু হয়। আফফানের এ মৃত্যুই জনমনে জমে থাকা ক্ষোভকে আরও তীব্র করে তোলে। এর পরপরই বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সদর দপ্তরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। আফফানের ঘটনা ইন্দোনেশিয়ার কোটি কোটি স্বল্প আয়ের মানুষের প্রতিচ্ছবি—যারা অনিশ্চিত আয়ের মধ্যে প্রতিদিন বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

আফফানের মৃত্যুর পর দেশটির রাজধানী জাকার্তা থেকে শুরু করে সুমাত্রা, সুলাওয়েসি, কালিমান্তান ও বালির রাস্তায় মানুষ নেমে আসে। তাদের আটকাতে টিয়ার গ্যাস, জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এসময় একাধিক স্থানে সংঘর্ষ এবং সরকারি ভবন ও সংসদ সদস্যদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভ দমনে দেশটির সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা শুধু অতিরিক্ত ভাতার বিরুদ্ধেই নয়; বরং সামগ্রিক বৈষম্য, দুর্নীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। অনেকের মতে, প্রতিবার নির্বাচনের আগে রাজনীতিবিদরা নানা প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু ক্ষমতায় বসার পর সাধারণ মানুষকে ভুলে যান। নারীবাদী কর্মীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারহরণের অভিযোগ তুলছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট প্রাবোও নির্বাচনী প্রচারণায় প্রবৃদ্ধি ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষমতায় এসে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোতে বড় কাটছাঁট করেছেন। তার জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সুযোগ আছে। দুর্নীতি দমন, অতিরিক্ত বল প্রয়োগের দায়ীদের শাস্তি এবং স্বচ্ছ শাসন ব্যবস্থা চালু করলেই কেবল জনআস্থা কিছুটা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

চাপের মুখে দেশটির সংসদ আবাসন ভাতা বাতিল, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত এবং অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে এতেই যে ক্ষুব্ধ জনতার মন শান্ত হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। ইন্দোনেশিয়ার ২৮ কোটিরও বেশি মানুষ এখন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈষম্য ও সামরিক প্রভাব বিস্তারের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। জনগণের দাবি স্পষ্ট—মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে, শাসন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

চলমান এই দাঙ্গা অনেক ইন্দোনেশীয়কেই ১৯৯৮ সালের পরিস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। সেবার সহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সে সময়ে দেশটির স্বৈরশাসক সুহার্তোর পতন হয়েছিল, যিনি তিন দশক ধরে দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন।

১৯৯৮ সালে বিক্ষোভকারীরা অভিজাতদের নিজ শ্রেণির সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত অংশকে সরাতে শুদ্ধি অভিযান চালাতে বাধ্য করেছিল। বাধ্য করেছিল একটি গণতান্ত্রিক সংস্কার করতে।

কিন্তু এবার তা সম্ভব বলে মনে হয় না—অন্তত এখনো নয়। যদিও ইন্দোনেশিয়া ১৯৯৯ সাল থেকেই একটি সাংবিধানিক গণতন্ত্রের দেশ, তবুও দেশটির রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এখনো তুলনায় ক্ষুদ্র একটি অভিজাত শ্রেণির কাছে বন্দি রয়েছে।

যখন অনেক ধনী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তিই প্রেসিডেন্ট প্রাবোওর স্বভাবগত কর্তৃত্ববাদকে ভয় পায়, তবুও বর্তমান সংকটে সম্ভবত তার সঙ্গেই তারা থাকবে নিজেদের ক্ষমতা টেকানোর স্বার্থেই।

প্রকৃতপক্ষে, প্রাবোও নিজেও এই বিক্ষোভকে নিজের কর্তৃত্বকে আরও দৃঢ় ভিতে দাঁড় করাতে কাজে লাগাবেন, যার কিছু নিদর্শন ইতিমধ্যে দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি সামরিক আইনও জারি করতে পারেন।

এর অর্থ হলো—যখন বর্তমান অস্থিরতা কেটে যাবে, এবং প্রাবোও ও তার ঘনিষ্ঠরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারবেন, তখন নাগরিক সমাজ, বিরোধী পক্ষ ও সমালোচকদের ওপর তিনি বাজেভাবে চড়াও হবেন। ইন্দোনেশিয়ার সামনে এখন সত্যিই এক অস্পষ্ট ভবিষ্যৎ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অশ্লীল স্পর্শের শিকার অক্ষয় কুমার

শিশু তাসনুহার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

‘ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে কাদের জায়গা নিশ্চিত?’, উত্তর দিলেন আনচেলত্তি

ডাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন মাহিন

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হলো 

ইঁদুরের কামড়ে হাসপাতালে প্রাণ গেল নবজাতকের, দেশজুড়ে চাঞ্চল্য

যে ৮ কারণে মুখের চামড়া কুঁচকে যায়

মোবাইল চার্জ দেওয়ার সঠিক সময় কখন?

বিয়ের ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের দায়ে যুবকের ২০ বছর কারাদণ্ড 

মুগ্ধতায় মিম

১০

এক নজরে দেখে নিন এশিয়া কাপের ৮ দলের স্কোয়াড

১১

এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশের সেরা একাদশ বাছাই করলেন আকাশ চোপড়া

১২

ফেসবুকে কোন সময়ে পোস্ট দিলে বেশি ভিউ পাওয়া যায়? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ

১৩

অবসর ভেঙে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণা কিংবদন্তি ক্রিকেটারের

১৪

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের শাহাদাতবার্ষিকী আজ

১৫

স্ত্রীর মুড সুইংয়ের কারণ ও প্রতিকার

১৬

ভাঙ্গা-ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ

১৭

লাঠিখেলা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, গ্রামবাংলার সংস্কৃতির অংশ: জুয়েল

১৮

ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ কেন এত ছড়িয়ে পড়ল?

১৯

চুরির অপবাদে যুবককে পেটালেন আ.লীগ নেতা, ভিডিও ভাইরাল

২০
X