চীনের ‘পান্ডা কূটনীতি’র কথা অনেকেই জানেন। দেশটি তার মিত্র ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের উপহার হিসেবে পান্ডা দিয়ে থাকে। তেমনি পাম তেল উৎপাদন ও রপ্তানিতে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ মালয়েশিয়া তার বৃহৎ ব্যবসায়িক অংশীদারদের এখন থেকে বন মানুষ (ওরাংওটাং) উপহার দেওয়ার ঘোষণা করেছে।
বুধবার রাজধানী কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী জোহারি আবদুল গনি বলেন, বিপন্ন প্রাণী ওরাংওটাং সংরক্ষণে সদিচ্ছার অংশ হিসেবে এখন থেকে তারা বৃহৎ ব্যবসায়িক অংশীদারদের ওরাংওটাং উপহার দেবেন।
তবে মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক প্রাণী সংরক্ষণবাদী সংস্থাগুলো সরকারের এ পরিকল্পনায় আপত্তি জানিয়ে বলেছে, এটি বাস্তবায়ন করা হলে পৃথিবী থেকে ওরাংওটাং বিলুপ্তির প্রক্রিয়া আরও এক ধাপ অগ্রসর হবে।
চীন গত কয়েক বছর ধরে তার মিত্র ও অংশীদারদের পান্ডা উপহার দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে চীনের এই সংস্কৃতি পরিচিতি পেয়েছে ‘পান্ডা কূটনীতি’ নামে। বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে জোহরি আবদুল গনি জানান, চীনকে অনুসরণ করে ওরাংওটাং কূটনীতিতে প্রবেশ করতে চায় তার দেশ।
দৈনন্দিন রান্নায় ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি ওষুধ ও প্রসাধান সামগ্রীর কাঁচামাল হওয়ায় বিশ্বজুড়ে বেশ ভালো চাহিদরা রয়েছে পাম তেলের। বর্তমানে পাম তেল উৎপাদন ও রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, তারপর দ্বিতীয় স্থানে আছে মালয়েশিয়া। চীন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো মালয়েশীয় পাম তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।
অন্যদিকে, ওরাংওটাং একটি বৃহৎ আকারের এপ (লেজবিহীন বানর) জাতীয় প্রাণী, যা বর্তমানে অতি বিপন্ন প্রাণীর তালিকাভুক্ত। কেবল ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার রেইন ফরেস্টে বন্য অবস্থায় এই প্রাণীটির দেখা মেলে। দুই দেশ মিলিয়ে এখন বিশ্বে অবশিষ্ট ওরাংওটাংয়ের সংখ্যা এক লাখের কিছু বেশি।
অনেকের কাছেই প্রাণীটি ‘বনমানুষ’ বা ‘ম্যান অব দ্য ফরেস্ট’ নামে পরিচিতি পাওয়া এই প্রাণীটির অতি বিপন্ন অবস্থায় পৌঁছানোর মূল কারণ দিনের পর দিন ধরে প্রাকৃতিক রেইনফরেস্ট উজাড় হয়ে যাওয়া। আর রেইনফরেস্ট উজাড় হচ্ছে মূলত বন ধ্বংস করে সেখানে কৃষি সম্প্রসারণ - বিশেষ করে পাম তেলের বাগান করার কারণে।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই উপহার প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে এই বার্তা দিতে চাই যে পাম তেল উৎপাদনের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা এবং বিশ্বজুড়ে তাকে ছড়িয়ে দিতে মালয়েশিয়া উদার।’
আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবাদী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ) এবং মালয়েশীয় প্রাণী সংরক্ষণবাদী সংস্থা জাস্টিস ফর মালয়েশিয়া এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ওরাংওটাং যেহেতু নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে বসবাসে অভ্যস্ত, তাই বাইরের দেশে পাঠানোর আগে ওই দেশের আবহাওয়ায় প্রাণীটি টিকে থাকতে পারবে কি না— উপহার প্রদানের আগে সেটি যাচাই করা জরুরি।’
মন্তব্য করুন