মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে দুই ব্যক্তিকে চাপা দেয় এক কিশোর। উচ্ছৃঙ্খলভাবে বিলাসবহুল গাড়ি ছোটানোর সময় এই দুর্ঘটনা ঘটায় সে। আর সেই কিশোরকে আইনের চোখ থেকে আড়াল করতে গিয়ে পরিবারের কাণ্ড যেন হার মানাল সিনেমাকেও। ঘটনাটি ভারতের পুনে শহরের।
গত ১৯ মে পুনের কল্যাণী নগরে বিলাসবহুল পোর্শে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় দুই তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের। গাড়িটি চালাচ্ছিল ১৭ বছরের এক কিশোর এবং পেছনের সিটে ছিল তার দুই বন্ধু।
তবে আইনের চোখ থেকে ওই কিশোরকে আড়াল করতে নানা রকম ফন্দিফিকির করতে থাকে তার প্রভাবশলী পরিবার। প্রথমে তারা পারিবারিক ড্রাইভারকে অর্থের লোভ দেখিয়ে দুর্ঘটনার দায় স্বীকার করতে বলে। পুলিশের কাছে ড্রাইভারকে স্বীকার করতে বলে যে দুর্ঘটনার সময় সেই গাড়ি চালাচ্ছিল।
ড্রাইভার রাজি না হলে তার ওপর নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে। এরপর তার ফোন কেড়ে নিয়ে একটি বাংলোয় আটকে রাখে ওই কিশোরের বাবা ও দাদা। পরে পুলিশের কাছে তাকে পালাতক দেখানোর চেষ্টা করে তারা।
অপরদিকে পুলিশ দুর্ঘটনার শিকার গাড়িটিতে লেগে থাকা রক্তের নমুনার সাথে অভিযুক্ত ওই কিশোরের রক্তের নমুনা মিলিয়ে দেখতে চায়। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রপ্ত ডাক্তার যখন ওই কিশোরের রক্তের নমুনা নিতে যায় তখন তাকে অর্থের বিনিময়ে রাজি করিয়ে ওই কিশোরের মায়ের রক্তের নমুনা দেওয়া হয়। ফলে গাড়ি থেকে পাওয়া রক্তের নমুনার সঙ্গে ওই কিশোরের বলে নেওয়া রক্তের নমুনা মেলে না।
অভিযুক্ত কিশোরের বাবা বিশাল আগরওয়াল পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তার নাবালক পুত্র নয়, দুর্ঘটনার সময় পোর্শের চালকের আসনে ছিল তাদের ড্রাইভার। আর এই বক্তব্যকে সমর্থন করে অভিযুক্ত কিশোরের দুই বন্ধু। তবে পুলিশ সে বক্তব্য বিশ্বাস না করে তদন্ত চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই কিশোরের বাবা এবং দাদাকে গ্রেপ্তার করে তদন্তকারী অফিসারেরা।
পুলিশের সন্দেহ ঘনীভূত হলে, অভিযুক্ত কিশোরের দুই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। দুর্ঘটনার সময় গাড়ির পেছনের সিটে ছিল তারা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে, গাড়িটি চালাচ্ছিল ওই কিশোর।
কিশোরের দুই বন্ধু দাবি করে, মদ্যপ অবস্থাতেই গাড়িটি চালাচ্ছিল সে। সেই সময় গাড়ির পেছনের আসনেই বসেছিল তারা। দুজনের বয়ানই রেকর্ড করেছে পুনে পুলিশ। দুই বন্ধুর আরও জানিয়েছে, ঘণ্টায় ২০০ কিমি গতিবেগে গাড়ি চালাচ্ছিল ওই কিশোর। তখনই গাড়িটি দুইজন ব্যক্তিকে ধাক্কা দেয়।
আদালত ৫ জুন পর্যন্ত ওই কিশোরকে একটি পর্যবেক্ষণ হোমে পাঠিয়েছে। বর্তমানে সেখানেই রয়েছে সে। তদন্তের স্বার্থে শুক্রবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
মন্তব্য করুন