বিশ্বের প্রায় ১৪০ কোটি রোমান ক্যাথলিক বিশ্বাসীর আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মার্কিন-পেরুভিয়ান ধর্মযাজক রবার্ট প্রেভোস্ট।
তিনি নতুন পোপ হিসেবে নিয়েছেন ‘লিও চতুর্দশ’ নাম, যা তার ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা ও আদর্শিক অবস্থান সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করে।
শুক্রবার (৯ মে) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে পোপ নির্বাচনের এই খবর নিশ্চিত করে।
প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন গরিববান্ধব নীতির এক প্রতীকী নেতা। আর্জেন্টিনার বস্তিবাসীদের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘গরিবের পোপ’ হিসেবে। তার মৃত্যুর পর নতুন পোপ কেমন হবেন- এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।
পোপ লিও চতুর্দশের নামগ্রহণ, প্রথম ভাষণ এবং তার পোশাকের মধ্য দিয়ে সেই প্রশ্নের অনেকাংশেই উত্তর মিলছে।
যদিও ‘লিও চতুর্দশ’ নামটি নতুন, এর ঐতিহাসিক দিক রয়েছে। ১৮৭৮ থেকে ১৯০৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী পোপ লিও ত্রয়োদশ ছিলেন সামাজিক ন্যায়বিচার ও শ্রম অধিকারের এক নির্ভীক পৃষ্ঠপোষক।
বিশ্লেষকদের মতে, সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই নতুন পোপ এই নাম বেছে নিয়েছেন। প্রখ্যাত যাজক ও বিশ্লেষক থমাস রীসের ভাষায়, এই নাম গ্রহণ করে লিও চতুর্দশ পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন- তিনি চার্চের সামাজিক দায়িত্ব ও শিক্ষা বিস্তারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভ্যাটিকানের সেইন্ট পিটার্স স্কয়ারে উপস্থিত হাজারো মানুষের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত প্রথম ভাষণে পোপ লিও চতুর্দশ শান্তি, নম্রতা ও ঐক্যের আহ্বান জানান। ভাষণের মূল ভাষা ছিল ইতালীয়, যদিও নিজের পেরুভিয়ান শিকড়কে সম্মান জানিয়ে কিছু অংশ স্প্যানিশে বলেন তিনি। ইংরেজি ভাষা পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়াকে অনেকে দেখছেন আঞ্চলিক সংস্কৃতির প্রতি আনুগত্য কিংবা নতুন এক রীতির সূচনার অংশ হিসেবে।
তিনি বলেন, স্রষ্টার শান্তি হোক আমাদের সকলের মাঝে- একটি নম্র, গভীর ও স্থায়ী শান্তি। প্রয়াত ফ্রান্সিসকে স্মরণ করে বলেন, তার সাহসী অথচ কোমল কণ্ঠ এখনো প্রতিধ্বনিত হয় আমাদের হৃদয়ে। ভাষণ শেষে ফ্রান্সিসের সর্বশেষ আশীর্বাদবাণীই ব্যবহার করেন তিনি- একটি ঐক্যের শক্তিশালী বার্তা।
পোশাকেও ধরা পড়েছে নতুন পোপের দৃষ্টিভঙ্গির ছাপ। ২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস ঐতিহ্য ভেঙে সাধারণ পোশাক পরিধান করলেও, লিও চতুর্দশ বেছে নিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী রক্তিম প্যাপাল ক্লোক ও সাদা রোবে গাম্ভীর্যপূর্ণ এক উপস্থাপন।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি স্পষ্ট বার্তা- তিনি চার্চের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সে ধারা রক্ষার মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে চান।
নতুন পোপের নেতৃত্ব কেমন হবে, তা সময়ই বলবে। তবে তার নাম, প্রথম ভাষণ ও পোশাকই জানিয়ে দিচ্ছে- লিও চতুর্দশ চার্চকে ঐতিহ্যের ভিত্তিতে স্থিতিশীল, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ পথে পরিচালিত করতে চান।
মন্তব্য করুন