বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ভাইরাসে চিংড়ি উৎপাদনে ধস, দিশেহারা চাষিরা

বাগেরহাটে প্রান্তিক চাষির ঘের একের পর এক খালি হয়ে যাচ্ছে। ইনসেটে মারা যাওয়া বাগদা চিংড়ি। ছবি : কালবেলা
বাগেরহাটে প্রান্তিক চাষির ঘের একের পর এক খালি হয়ে যাচ্ছে। ইনসেটে মারা যাওয়া বাগদা চিংড়ি। ছবি : কালবেলা

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন মুখ থুবড়ে পড়েছে। বছরের পর বছর চিংড়ির গায়ে সাদা স্পট ও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঘেরে দফায় দফায় মারা যাচ্ছে দেশের অন্যতম রপ্তানিযোগ্য এই পণ্য।

চিংড়ির রোগবালাই প্রতিরোধ করতে না পেরে জেলার অধিকাংশ চাষিই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে মৎস্য বিভাগ ও চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন তারা।

বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া গ্রামের চাষি ভোলা নাথ বিশ্বাস বলেন, গত দুই দশক ধরে ৩ বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করছি। কখনো লাভবান হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোগবালাইয়ের কারণে চাষে টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এ মৌসুমের শুরুতে ভালো উৎপাদন হলেও মাছ ধরার আগেই তিন দফায় চিংড়ি মরতে শুরু করে। অনেক চিংড়ির গায়ে সাদা স্পট দেখা দেয় আবার অনেক মাছ পানিতে মরে পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

শুধু ভোলা নাথ বিশ্বাস নয়, জেলার অনেক প্রান্তিক চাষির ঘেরও একের পর এক খালি হয়ে যাচ্ছে। চাষিরা বলছেন নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘের পরিচর্যা করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। বিশেষ করে প্রচণ্ড রোদের পরপরই বৃষ্টি নামলে চিংড়ি মরতে শুরু করে। অনেক সময় মাছ ভেসে ওঠে, আবার কখনো ঘাসের উপর উঠে গিয়েই মারা যায়।

শরণখোলা উপজেলার চাষি হানিফ শেখ বলেন, চিংড়ি চাষে ঋণ নিয়ে ঘের করেছি এখন ঘের খালি হয়ে গেছে। দালালদের কাছে ঋণ শোধ দিতে না পারলে জমি বিক্রি করতে হবে।

মোড়েলগঞ্জের চাষি মেহেদী হাসান বলেন, চিংড়ি উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে দামও অস্থির। আগে মৌসুমে লাখ টাকার মতো আয় হতো এখন খরচও উঠছে না। সরকার চাইলে আমাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারে।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি সুমন ফকির বলেন, প্রতিবছরই ভাইরাস ও সাদা স্পট রোগে কিছু চিংড়ি মারা যায়। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন—চিংড়ি মরে গিয়েও পঁচে যাচ্ছে আবার তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি একেবারেই থমকে গেছে। এ অবস্থায় মৎস্য বিভাগ ও চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তারা।

চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টির পর হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ছে। তারা মনে করেন সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে চাষিদের বৈজ্ঞানিক নিয়ম মেনে ঘের পরিচর্যা করতে হবে।

এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ কালবেলাকে বলেন, ভাইরাসের পাশাপাশি পানি স্বল্পতা, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও লাগাতার বৃষ্টির কারণে নোনা পানির চিংড়ি মারা যাচ্ছে। চাষিদের পরিকল্পিতভাবে পোনা নির্বাচন, ঘের প্রস্তুতি এবং পানি ব্যবস্থাপনা করার পরামর্শ দিচ্ছি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলায় ৫১ হাজার ১৫৯ হেক্টর জমিতে ৪৬ হাজার ৩১৩টি বাগদা চিংড়ি ঘের রয়েছে। গত অর্থ বছরে এ জেলায় উৎপাদিত বাগদা চিংড়ির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন। কিন্তু এবার উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অনেক কম হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কৃষক দলের সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম কারাগারে 

ডিবি হারুনসহ ১৮ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত 

হত্যা মামলায় আনিসুল, রাতের ভোটের মামলায় হেলালুদ্দীন গ্রেপ্তার 

পুকুরে ভাসছিল নিখোঁজ হাফেজ ইমরানের মরদেহ

বিপিএলে এক ম্যাচ হারতে ৪০০ কোটি টাকার প্রস্তাব!

‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বার্তা ফাঁসকারী পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার

অবৈধভাবে কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য ৬ কোটি ডলার জরিমানা

ঘুমধুম সীমান্তে আরকান আর্মির ২ সহযোগী আটক

এশিয়া কাপে বাদ পড়ার শঙ্কায় গিল-সিরাজ

শান্তির আশায় ওয়াশিংটনে জেলেনস্কি

১০

সাভার উপজেলাকে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষণা, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ জারি

১১

অশ্রুসিক্ত নেইমার, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হারে ভেঙে পড়ল সান্তোস

১২

জুলাই হত্যাযজ্ঞ / শেখ হাসিনা-কামালের বিরুদ্ধে পঞ্চম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ

১৩

সাগরে তিন দিন ভাসতে থাকা ৮ জেলে উদ্ধার

১৪

কুয়েতে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি, বাংলাদেশিসহ ১৪ নারী আটক

১৫

ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি গ্রেপ্তার

১৬

সকালে খালি পেটে মাঠা খাচ্ছেন, কী বলছেন পুষ্টিবিদরা

১৭

গজারিয়ায় দুই জলদস্যু হত্যা, প্রতিপক্ষের ৮ বাড়িতে আগুন 

১৮

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১৯

ভাইরাসে চিংড়ি উৎপাদনে ধস, দিশেহারা চাষিরা

২০
X