রণাঙ্গনে তুর্কি ড্রোনের দাপট এখন কারোই হয়তো অজানা নয়। আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ থেকে শুরু করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সফলতার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে তুরস্কের তৈরি বিভিন্ন সামরিক ড্রোন।
যুদ্ধের পাশাপাশি শান্তিকালীন অভিযানেও নিজের অপ্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রেখেছে তুরস্কের ড্রোন বহর, যার সর্বশেষ নজির দেখা গেল ইব্রাহিম রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারকাজে।
বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশের আকাশ সুরক্ষায় নিজেকে প্রমাণ করছে তুর্কি ড্রোন বহর।
তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশের আকাশ সুরক্ষায় অবদান রাখছে তুরস্কের তৈরি বিভিন্ন ড্রোন। দেশটির প্রযুক্তিমন্ত্রী মেহমেত ফাতিহ কাসের এমন দাবি করেন।
তুরস্কের এ মন্ত্রী জানান, প্রযুক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মূল্যবান যতক্ষণ পর্যন্ত এটি মানবতার স্বার্থে ব্যবহার করা হয়।
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রাজধানী সারাজেভো বিজনেস ফোরামে অংশ নিয়ে মেহমেত ফাতিহ জানান, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের স্থানীয়করণ ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশের বেশি দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে দেশটিতে সাড়ে তিন হাজার কোম্পানি ও প্রায় ৮০ হাজার দক্ষ কর্মী প্রতিরক্ষা শিল্পে অবদান রাখছে। কাসির জানান, প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নতি একটি দেশের সভ্যতার অগ্রগতিকে মূল্যায়ন করে থাকে।
মেহমেত ফাতিহ জানান, তুরস্ক তার নিজস্ব ও জাতীয় সমরাস্ত্রের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা চাহিদার অধিকাংশ পূরণ করছে। বর্তমানে ইউরোপের বাজারে তুরস্ক প্রতিরক্ষা শিল্প ও প্রযুক্তি উভয় খাতেই বেশ শক্ত অবস্থানে আছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি তুরস্ক ইউরোপের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী এবং বাণিজ্যিক যানবাহন, ফ্ল্যাট গ্লাস, সোলার প্যানেল, লোহা ও ইস্পাত থেকে শুরু করে সিমেন্ট এবং সাদা পণ্য পর্যন্ত একাধিক সেক্টরে আধিপত্য করছে বলেও মন্তব্য করেন তুর্কি প্রযুক্তিমন্ত্রী।
তুরস্কের প্রশাসন অনেকদিন ধরেই ড্রোনের কার্যকারিতা উপলব্ধি করছিল। এর আগে ২০১০ এবং ২০১২ সালে দুই দফায় তুরস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় ড্রোনের চাহিদার কথাও জানিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন তাতে সাড়া দেয়নি।
পরে তুরস্ক নিজেরাই ড্রোন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ খাতে বিপুল বিনিয়োগ করে। এর ফল হিসেবে তুরস্ক ড্রোন শিল্পে নতুন পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বে আবির্ভূত হয়েছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশ্বজুড়ে তুর্কি ড্রোনের জনপ্রিয়তার পেছনে বড় কারণ হলো বিশ্ববাজারে এর কম দাম এবং বিক্রয় প্রক্রিয়াও সহজ। তুর্কি ড্রোনগুলো মার্কিন ড্রোনের তুলনায় বেশ সস্তা।
অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের নীতি-নির্ধারকরা বিদেশে অস্ত্র বা সামরিক উপকরণ বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত যেভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করছেন এবং জটিল সব নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করছেন, তুরস্কের ড্রোনের বিক্রি প্রক্রিয়া সে তুলনায় অনেকটাই সহজ। তুর্কি ড্রোনগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে ক্রেতা দেশগুলোকে এ ধরনের কোনো জটিলতায় পড়তে হয় না।
মন্তব্য করুন