সৌন্দর্য প্রশংসিত হওয়ার কথা, ভালোবাসার কথা। কিন্তু কখনও কখনও সৌন্দর্যই হয়ে ওঠে হিংসার কারণ। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার শান্তিপুর থানার অন্তর্গত বেরপাড়া এলাকায়।
সেখানে স্ত্রী মধু খাতুনের সৌন্দর্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে স্বামী বাপন শেখ মাঝরাতে তার স্ত্রীর নাক কামড়ে দেন। রক্তাক্ত অবস্থায় মধুকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। এই নৃশংস ঘটনার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত স্বামীকে।
প্রায় ৯ বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন বাপন শেখ ও মধু খাতুন। শুরুতে সংসার ছিল শান্তিপূর্ণ। তাদের আট বছরের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাপনের আচরণে পরিবর্তন আসে।
স্ত্রীর সৌন্দর্য নিয়ে তিনি সন্দেহ ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন। বিশেষ করে স্ত্রীর নাকের সৌন্দর্য নিয়ে তিনি প্রায়ই মন্তব্য করতেন—তোর নাকটা এত সুন্দর কেন? কেউ প্রেমে পড়ে যাবে না তো?
প্রথমে এসব কথাকে মধু হালকাভাবে নিলেও ধীরে ধীরে তা ভয়ংকর রূপ নেয়। বাপন প্রায়ই বলতেন, তোর নাকটা একদিন কামড়ে খেয়ে নেব! শুধু কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, একবার স্ত্রীকে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারার হুমকিও দেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) গভীর রাতে ঘটল সেই ভয়ংকর ঘটনা। স্ত্রী মধু যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন মদ্যপ অবস্থায় স্বামী বাপন আচমকা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং নাকে কামড় বসান। ব্যথায় চিৎকার করে ওঠেন মধু, ঘুম ভেঙে বুঝতে পারেন তার নাক রক্তে ভেসে যাচ্ছে। বাধা দিতে গেলে স্বামী তার আঙুলেও কামড় দেন বলে অভিযোগ। কোনো রকমে নিজেকে মুক্ত করে বাইরে পালিয়ে যান তিনি।
পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার নাকে গভীর ক্ষত হয়েছে, যা অস্ত্রোপচার করে সেলাই করতে হয়েছে। চিকিৎসার পর ব্যান্ডেজ করা হয়।
সামান্য সুস্থ হওয়ার পরই মধু শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি অভিযোগে বলেন, স্বামী সবসময় আমার রূপ নিয়ে সন্দেহ করত। ভাবত, আমার সৌন্দর্য দেখে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে। আর সেই সন্দেহ থেকেই সে আমার নাক কামড়েছে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে শান্তিপুর থানার পুলিশ বাপন শেখকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি পুলিশের হেফাজতে আছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। অনেকে বলেন, মধু খুব ভালো মেয়ে। কারও সঙ্গে ঝামেলা নেই। ওর ওপর এমন বর্বরোচিত হামলা মেনে নেওয়া যায় না। অনেকে এ ঘটনাকে নারী নির্যাতনের জঘন্য উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতা ও ঈর্ষা থেকে এ ধরনের মানসিক বিকার তৈরি হতে পারে। তবে তার নাম যদি হয় ভালোবাসা—তাহলে তা রক্তাক্ত হয় না। এটি নিছক ভালোবাসার অভাব, বিকৃত মানসিকতা ও সহিংসতার ফল।
মন্তব্য করুন