পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অবস্থান তুলে ধরতে গঠিত বহুদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) মুসলিম সংসদ সদস্য ইউসুফ পাঠানকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে দলটি।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়ে তৃণমূল জানিয়েছে- দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই প্রতিনিধি মনোনয়ন করেছে কেন্দ্র, যা একতরফা ও অগণতান্ত্রিক।
সোমবার (১৯ মে) টিএমসির এই মুসলিম নেতা নাম প্রত্যাহার করেছেন বলে দেশটির গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পেহেলগামে প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে হামলা চালায় ভারত। এই ঘটনার পর ভারতের অবস্থান বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে ‘ওয়ান মিশন, ওয়ান মেসেজ, ওয়ান ভারত’ স্লোগানে ৭টি বহুদলীয় সংসদীয় দল গঠন করা হয়, যাদের ৩০টিরও বেশি দেশে পাঠানো হবে।
এই উদ্যোগে ইউসুফ পাঠানের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল সঞ্জয় ঝা’র নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলে, যারা যাবেন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও সিঙ্গাপুরে।
তবে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় সরকার রাজনৈতিক দলের মতো না নিয়েই একতরফাভাবে সংসদ সদস্যের নাম ঠিক করেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। দলীয় সূত্রে জানানো হয়, তৃণমূল কংগ্রেস ঠিক করবে, তারা কাকে প্রতিনিধিত্বে পাঠাবে। বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
এক তৃণমূল নেতা বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দেশের গর্ব। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতি কেন্দ্রীয় সরকারের একক দায়িত্বের বিষয়। সেই কাজ তারাই করুক। বিদেশে ভারতের অবস্থান তুলে ধরার দায়িত্ব কেন্দ্রই বহন করুক। এ বিষয়ে অন্য দলের ওপর দায় চাপিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা অনুচিত।
এই ঘটনার আগে, কংগ্রেসও একইভাবে অভিযোগ করে, তাদের পছন্দের নাম বাদ দিয়ে শশী থারুরকে সরকার নিজেই মনোনীত করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউসুফ পাঠানের নাম প্রত্যাহার বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ তিনি একজন মুসলিম নেতা, আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানবিরোধী কূটনৈতিক উদ্যোগে একজন মুসলিম মুখকে যুক্ত করার বিষয়টি কেন্দ্র চিত্রায়িত করতে চেয়েছিল ‘জাতিগত ঐক্য’ ও ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান’ হিসেবে। কিন্তু দলীয় মতামত উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তা ব্যুমেরাং হয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ভারত এই উদ্যোগে যে দেশগুলোতে প্রতিনিধিদল পাঠাবে তার মধ্যে রয়েছে- সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, আলজেরিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালি, ডেনমার্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, মিসর, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রসমূহ।
এই প্রতিনিধিদলের মূল লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কূটনৈতিক লড়াইকে জোরদার করা, অপপ্রচার মোকাবিলা করা এবং আন্তর্জাতিক মহলে পেহেলগামের হামলাকে প্রথম আগ্রাসন হিসেবে তুলে ধরে ভারতের প্রতিক্রিয়া বৈধ প্রমাণ করা।
তবে এই উদ্যোগে বিরোধী দলগুলোর একের পর এক আপত্তি কেন্দ্রের রাজনৈতিক কৌশল এবং দলীয় মত উপেক্ষার বিষয়টিকে সামনে এনে দিয়েছে। এতে কেন্দ্রের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার স্বচ্ছতা এবং সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
মন্তব্য করুন