থাইল্যান্ড থেকে ফিরছিলেন এক ভারতীয় যাত্রী। বাইরে ঝলমলে সূর্য, বিমানের যাত্রাও ছিল নির্বিঘ্ন- সবকিছুই ছিল এক নিখুঁত ভ্রমণের মতো। কিন্তু মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখার পরপরই ভ্রমণটা রূপ নেয় এক রোমাঞ্চকর নাটকে।
কাস্টমস কর্মকর্তারা যখন তার ব্যাগ খুললেন, তখন কেউ কল্পনাও করতে পারেননি সে ব্যাগ যেন এক বিষধর চিড়িয়াখানা! একে একে বেরিয়ে এলো ভয়ঙ্কর সব সাপ ও বিরল প্রজাতির সরীসৃপ, মুহূর্তেই বিমানবন্দরে নেমে আসে চাঞ্চল্যের ঝড়।
সোমবার (২ জুন) মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত যাত্রী থাইল্যান্ড থেকে আসছিলেন। খবরটি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, যাত্রীর ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৭টি বিষধর সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিপজ্জনক সরীসৃপ। এসব প্রাণীকে ব্যাগের ভেতরে গোপনে বহন করা হচ্ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রাণীগুলোর বেশিরভাগই অবৈধভাবে পাচারের উদ্দেশ্যে আনা হচ্ছিল।
মুম্বাই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগের টুইটার) কিছু ছবি প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, রঙিন বিষধর সাপগুলো একটি ট্রেতে কিলবিল করছে। পোস্টে জানানো হয়, যাত্রীর লাগেজ থেকে উদ্ধার করা হয়- ৩টি স্পাইডার-টেইল্ড হর্নড ভাইপার, ৫টি এশিয়ান লিফ টার্টল এবং ৪৪টি ইন্দোনেশীয় পিট ভাইপার।
এই প্রাণীগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই বিরল ও বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত। এসব প্রাণীর উৎস কী এবং পাচারচক্রের সঙ্গে অভিযুক্ত যাত্রীর কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, এ ধরনের প্রাণী আমদানি বা পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, যদি না সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন ও লাইসেন্স থাকে। ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। তিনি পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন এবং তার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্যও পাওয়া যায়নি।
ভারতে বিমানবন্দর হয়ে বন্যপ্রাণী পাচারের ঘটনা নতুন নয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দিল্লি বিমানবন্দরে এক কানাডীয় যাত্রীর ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি কুমিরের খুলি।
ফেব্রুয়ারিতে মুম্বাই বিমানবন্দরে ধরা পড়ে এক যাত্রী, যার ব্যাগ থেকে পাওয়া যায় পাঁচটি সিয়ামাং গিবন- এরা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের বনাঞ্চলে পাওয়া যায় এবং বিপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত।
গত নভেম্বরে ব্যাংকক থেকে ফেরা দুই যাত্রীর কাছ থেকে ১২টি বিদেশি কচ্ছপ জব্দ করে কাস্টমস। এর আগেও ২০১৯ সালে চেন্নাই বিমানবন্দরে এক যাত্রীর ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় একাধিক বিদেশি প্রাণী- একটি হর্নড পিট ভাইপার, পাঁচটি ইগুয়ানা, চারটি ব্লু-টাং স্কিঙ্ক, তিনটি গ্রিন ট্রি ফ্রগ এবং ২২টি মিসরীয় কচ্ছপ।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পাচার শুধু পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং এটি জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। বিষধর সাপ বা বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী অজ্ঞাত পরিবেশে নিয়ে গেলে তাদের আচরণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠতে পারে, যা বিপজ্জনক।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ধরনের পাচার রোধে বিমানবন্দরে নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে পাচারচক্র ধ্বংসে কাজ চলছে।
মন্তব্য করুন