এক ডিজিটাল ক্রিয়েটরকে অনলাইন হয়রানির অভিযোগে এক পুলিশ কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সরকারি তথ্যের অপব্যবহার করে ওই নারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ করার অভিযোগে কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগ অনুসারে, পিসিআর (পুলিশ কন্ট্রোল রুম) ডিউটিতে থাকা অবস্থায় ওই কনস্টেবল একটি সাদা টাটা পাঞ্চ গাড়িতে এক নারীকে দেখে তার প্রতি আকৃষ্ট হন। এরপর সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে তিনি নারীর ব্যক্তিগত তথ্য খুঁজে বের করেন — যা পুলিশের পেশাগত আচরণের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
এই তথ্য ব্যবহার করে কনস্টেবল ওই নারীর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল খুঁজে বের করেন এবং একটি পোস্টে মন্তব্য করেন ‘১৫ মিনিট আগে আপনি কি আরডি সিটি গেট ৩ থেকে বেরিয়ে সেক্টর ৪৫-এ প্রবেশ করেছেন টাটা পাঞ্চ গাড়িতে?’
প্রথমে নারীটি ভেবেছিলেন এটি কোনো পরিচিত নারীর কৌতুকপূর্ণ মন্তব্য। কিন্তু পরে সন্দেহ হলে তিনি ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চান। কনস্টেবল জবাবে বলেন, ‘পুলিশের চোখ খুব তীক্ষ্ণ’ এবং ইনস্টাগ্রামে ব্যক্তিগত বার্তায় কথা চালিয়ে যেতে বলেন।
ক্রমে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে ইনস্টাগ্রামে বার্তা পাঠানো ব্যক্তি একজন কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল, যিনি ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার দিন এলাকায় পিসিআর ভ্যানে টহল দিচ্ছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে ১৪ সেপ্টেম্বর, ভারতের গুরগাঁওয়ের আরডি সিটি এলাকায়।
বিষয়টি বুঝতে পেরে, নারীটি ৩ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তায় পুরো ঘটনার বিবরণ দেন। ভিডিওটিতে তিনি বলেন, ‘একজন পুলিশ কর্মকর্তা, যার দায়িত্ব আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সেই ব্যক্তি নিজের পদ ব্যবহার করে আমার গোপনীয়তা ভঙ্গ করেছেন। শুধু আমার গাড়ির নম্বর দেখে তিনি আমার তথ্য খুঁজে বার করেছেন ও সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন।’
পুলিশ কর্মীটি আরও মন্তব্য করেন, তিনি মনে করেন ওই নারী তার বয়সের তুলনায় অনেক কম দেখেন এবং জানান তার কোনো নারী বন্ধু নেই।
নারীটি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম ৫০ বছর বয়সে এসে এমন কিছু হয়তো আর সহ্য করতে হবে না। কিন্তু এখনও নিজেকে রক্ষা করতে হচ্ছে। তাহলে কিশোরী ও তরুণীরা কতটা ভয়ানক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়, ভাবলেই শিউরে উঠি।’
নারীটি ১৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। প্রাথমিকভাবে পুলিশ তাকে অভিযুক্তকে ব্লক করার পরামর্শ দেয়। তবে ২৩ সেপ্টেম্বর, অভিযোগের ভিত্তিতে কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয় এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির বিএনএস ধারা ৭৯-এর অধীনে মামলা করা হয়, যা নারীর শালীনতা লঙ্ঘনের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রযোজ্য।
গুরগাঁও পুলিশের এএসআই সন্দীপ কুমার জানান, এই ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট — কোনো রকম সহনশীলতা দেখানো হবে না। তদন্তের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্ত কনস্টেবলের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন