টানা ১১ সপ্তাহের অবরোধের পর অবশেষে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেছে মানবিক সহায়তা।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাঠানো ১০৭টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করে। খবর বিবিসির।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অধীনস্থ সংস্থা ‘কোগাট’ নিশ্চিত করেছে, এ ত্রাণগুলো গাজার উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, আমরা গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করছি। তবে আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এই ত্রাণ যেন কোনোভাবে হামাসের হাতে না পড়ে।
ইসরায়েল বরাবরই দাবি করে আসছে, হামাস তাদের দেওয়া ত্রাণ জব্দ করে এবং নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
যদিও কেরেম শালোম দিয়ে ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে, তবে জাতিসংঘ এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি যে এই ত্রাণ গাজার সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছেছে কি না।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) কর্মকর্তা অতওয়ান রেনার্ড বিবিসিকে বলেন, প্রতিদিন অন্তত ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রয়োজন শুধু খাদ্যের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য। এই সরবরাহ এক দিনের জন্য হলেও সহায়ক, তবে সামগ্রিক চাহিদার তুলনায় এটি অতি সামান্য।
বিবিসির বর্ষীয়ান সংবাদদাতা জেরেমি বোয়েন মন্তব্য করেছেন, ২০ লাখের বেশি গাজাবাসীর জন্য এই ত্রাণ মোট চাহিদার তুলনায় একফোঁটা পানির মতো।
যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতিদিন গাজায় প্রায় ৫০০টি ট্রাক প্রবেশ করত, যেগুলোর মধ্যে খাদ্য, ওষুধ, শিশু খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী থাকত। বর্তমানে জাতিসংঘ মনে করছে, এই সংকট মোকাবিলায় প্রতিদিন অন্তত ৬০০টি ট্রাক দরকার।
ইসরায়েল মার্চ মাসের শুরু থেকেই গাজার সব ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ও বিভিন্ন এনজিও সতর্ক করে বলছে, গাজার ২১ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্য সংকটে রয়েছে। অনেক এলাকায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ-সমর্থিত সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন (আপিসি) জানিয়েছে, আগামী মাসে গাজায় অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে। অপুষ্টির মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যে, ক্ষুধা, দুর্বলতা ও মৃত্যুহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাবে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো দ্রুত ও স্থায়ীভাবে মানবিক সহায়তার প্রবাহ চালুর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, এককালীন ট্রাক প্রবেশ নয়, বরং ধারাবাহিক ও অব্যাহত সহায়তা ছাড়া এই সংকট নিরসন সম্ভব নয়।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মানুষ আজ শুধু একটি বেঁচে থাকার সুযোগ চায়। ত্রাণ প্রবেশের এই সামান্য অগ্রগতি হয়তো আশার আলো, তবে পুরো আলোর জন্য এখনো অনেক পথ বাকি।
মন্তব্য করুন