আমেরিকা কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ঘাঁটি পরিচালনা করে আসছে। যে কোনো সময় হুমকি মোকাবিলায় বা শত্রুপক্ষে আঘাত হানতে ঘাঁটিগুলোকে সজাগ ও সক্ষম রাখে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয়, আমেরিকাকে বিশ্ব মোড়লের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত রেখেছে এসব ঘাঁটি।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস অনুসারে, আমেরিকা এই অঞ্চলের কমপক্ষে ১৯টি স্থানে স্থায়ী এবং অস্থায়ী উভয় ধরনের সামরিক ঘাঁটির একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এর মধ্যে আটটি স্থায়ী ঘাঁটি বাহরাইন, মিশর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত।
এই অঞ্চলে তাদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি রয়েছে কাতারে। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে বিপুলসংখ্যক মার্কিন সেনা রয়েছে। এখানে অন্তত ১০০ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি ড্রোন, বোম্বারসহ উন্নত যুদ্ধযান সক্রিয়। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময় এ ঘাঁটি কেন্দ্রীয় কমান্ড সেন্টারের কাজ করে।
এ ছাড়া ইরাক, সিরিয়া, বাহরাইন, ওমান, তুরস্কে মার্কিন ঘাঁটি আছে। এসব ঘাঁটিতে সাধারণ সময়ে প্রায় ৪০-৫০ হাজার মার্কিন সেনা থাকে। তবে বড় কোনো অভিযানের সময়ে তা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়। যেমন, ২০০৩ সালে ইরাকে হামলার পর ২০০৭ সালের মধ্যে এসব ঘাঁটিতে মার্কিন সেনাসংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি।
১৯৫৮ সালের জুলাই মাসে লেবানন সংকটের সময় বৈরুতে যুদ্ধ সেনা পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম মার্কিন সেনা মোতায়েনের ঘটনা এটি। লেবাননে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির সময় প্রায় ১৫ হাজার মেরিন এবং সেনা সদস্য সেখানে অবস্থান করে। এরপর ক্রমশ অন্যান্য দেশে ঘাঁটি গাড়তে থাকে মার্কিন সেনারা।
মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত করে রেখেছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সমর্থনে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ালেই এসব ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে তেহরান। তা না হলেও মার্কিন বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সংঘাত বাড়লে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা প্রায় নিশ্চিতভাবেই মার্কিন জাহাজ এবং মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ করবে।
ইরান ইতোমধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখেছে। এসব পদক্ষেপ ইরানের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক আঘাতের ইঙ্গিত। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে তিন ডজনেরও বেশি জ্বালানিবাহী বিমান পাঠিয়েছে। এসব বিমান প্রয়োজনে মার্কিন যুদ্ধবিমানকে আকাশে জ্বালানি সরবরাহ করবে অথবা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর সম্ভাব্য হামলার সময় বোমারু বিমানের কার্যক্ষমতা বাড়াবে।
এ ছাড়া মার্কিন নৌবাহিনীর নতুন ও বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড ভূমধ্যসাগরে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগির তা ইরানের দিকে যাত্রা করবে। ইরানের সঙ্গে চূড়ান্ত সংঘাত শুরু হলে এ রণতরী থেকে ঘাঁটিগুলোকে প্রয়োজনীয় সাহায্যের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্র : আলজাজিরা
মন্তব্য করুন