ইরানে পুলিশি হেফাজতে মাশা আমিনি নামের এক তরুণীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বাবাকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাশা আমিনির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বাবাকে গ্রেপ্তার করে ইরানের পুলিশ। তবে এর কিছু সময় পরে তাকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। দিনটিতে তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আটক ছিলেন। এ ছাড়া এ দিন দেশটিতে ১৯৭৯ সালে শাহের পতনের পর সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হিজাব ঠিকমতো না পরার কারণে মাশা আমিনি নামে ওই তরুণীকে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে দেশটির নৈতিকতা পুলিশ। পরে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আন্দোলনে সংহতি জানালে একপর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে পাঁচ শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়। গ্রেপ্তার করা হয় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুকে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ইরানের বাইরেও। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ দমনপীড়ন বন্ধ করতে ইরান সরকারকে আহ্বান জানায়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে এ সময়ে ইরানে দমনপীড়ন অব্যাহত থাকে। ওই সময়ে দেশটির সরকার জানায়, বিদেশি শক্তির মদদে এ আন্দোলন হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার ও জেলে নিয়ে নির্যাতনের বহু অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, বিক্ষোভে জড়িত থাকার অপরাধে কয়েকজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়ে তা কার্যকরও করা হয়েছে। সর্বশেষ গত আগস্টে ইরানে নারীদের হিজাব পরা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর আইন প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মাশা আমিনির মৃত্যুর পর ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ব্যাপক সহিংস দমনপীড়নের কথা উল্লেখ করে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুতে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সরকারবিরোধী এ বিক্ষোভ দমনে সহিংসতা, গণগ্রেপ্তার, ইন্টারনেটের ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করে ইরানি কর্তৃপক্ষ।
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও অন্য অংশীদাররাও চলতি সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা ইরানিদের মানবাধিকার দমন করবে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পাশাপাশি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখব।
মন্তব্য করুন