আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ সাবমেরিন থেকে আবারও একধরনের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড। বুধবার (২১ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
এর ফলে তল্লাশি অভিযানের আওতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। একটি এইচসি-১৩০ হারকিউলিস ফ্লাইট ৮৭৯ মাইল (১৪শ কিলোমিটার) এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে কোস্টগার্ডের ক্যাপ্টেন জেমি ফ্রেডরিক বলেছেন, তল্লাশি অভিযানে শিগগিরই আরও জাহাজ এবং রিমোটলি অপারেটেড ভেহিক্যাল (গভীর সাগরে অনুসন্ধান করার যন্ত্র) যুক্ত করা হবে।
এর আগে মঙ্গলবার (২০ জুন) অনুসন্ধানের তৃতীয় দিনে কানাডীয় উড়োজাহাজ সাবমেরিক নিখোঁজ হওয়া এলাকায় পানির তলদেশে শব্দ শোনা শনাক্ত করে। পরে তা যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ডকে জানানো হয়।
সাবমেরিনটিতে যে পরিমাণ অক্সিজেন মজুত থাকে, তা দিয়ে ৯৬ ঘণ্টা পানির নিচে টিকে থাকা যায়। সে অনুযায়ী, সাবমেরিনটি যদি এখন পর্যন্ত অক্ষত থাকে, তাহলে এর যাত্রীরা বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকাল পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ পাবেন।
ফ্রেডরিক বলেন, যাত্রীদের বেঁচে থাকার ক্ষীণ আশা থাকায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে ট্যুর ফার্ম ওশানগেট জানিয়েছে, তাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ এখন সাবমেরিনে থাকা ক্রু সদস্য ও তাদের পরিবারের দিকে। যেসব সরকারি সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান এই উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে, তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এবছর তাদের একটি অভিযান চলছে এবং সামনের বছরের জুনে আরও দুটি অভিযান হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ধরনের ছোট আকারের সাবমার্সিবল বা ডুবোজাহাজে সাধারণত একজন চালক এবং তিনজন যাত্রী থাকে। আরেকজন থাকে 'কনটেন্ট এক্সপার্ট' যিনি সাগরের নিচের সবকিছু পর্যটকদের কাছে ব্যাখ্যা করেন।
কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস থেকে এই ডুবোজাহাজটি যাত্রা শুরু করেছিল। সাধারণত সাগরের তলদেশে ধ্বংসাবশেষের কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসতে আট ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
ওশানগেটের আরও তিনটি সাবমার্সিবল থাকলেও, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষমতা আছে শুধু 'টাইটান'-এর।
এ ডুবোজাহাজটির ওজন ২৩ হাজার পাউন্ড (১০ হাজার ৪৩২ কেজি) এবং ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, এটি ১৩ হাজার ১০০ ফুট পর্যন্ত গভীরতায় পৌঁছাতে পারে এবং পাঁচজন ক্রুর জন্য ৯৬ ঘণ্টার লাইফ সাপোর্ট দিতে পারে।
পোলার প্রিন্স নামক আরও একটি জাহাজ- যেটি এই সাবমেরিনকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পর্যন্ত পরিবহন করতে ব্যবহৃত হয়, সেটিও এই অভিযানে যুক্ত ছিল বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন এটির মালিক।
আটলান্টিক সাগরের যে এলাকায় বর্তমানে অবস্থান করছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ, সেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে। সাগরের গভীরে এই ধ্বংসাবশেষটি দেখতেই ওশনগেট নামের একটি সাবমেরিনে চেপে রওনা হন চালকসহ মোট ৫ জন।
যাত্রীরা হলেন- ব্রিটিশ ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিং (৫৮), ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯), ওশনগেটের শীর্ষ নির্বাহী স্টকটন রাশ (৬১) ও সাবমেরিনটির চালক ও ফরাসি নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা পল হেনরি নারগিওলেট (৭৭)। এই অভিযানে যাওয়ার জন্য প্রত্যেক অভিযাত্রীর মাথাপিছু খরচ হয়েছে আড়াই লাখ ডলার।
১৯১২ সালে যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে প্রথম যাত্রাতেই ভাসমান হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে টাইটানিক ডুবে যায়। এই দুর্ঘটনায় জাহাজে থাকা ২ হাজার ২০০ যাত্রী ও ক্রুদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার জন নিহত হন। ১৯৮৫ সালে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার হয়।
মন্তব্য করুন