

ব্রাজিলের বেইলেমে শেষ হলো জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০। একদিকে আলোচনা কক্ষে কাগজ উল্টেপাল্টে বিবৃতি সাজানোর তোড়জোড়, অন্যদিকে ভেন্যুর বাইরে হাসিমুখে ছবি তুলছে অংশগ্রহণকারীরা— সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
শুধু উৎসবটা শেষমেশ জলবায়ুর পক্ষে হলো কি না, তা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের মনে সন্দেহ রয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গা— জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো নিয়ে যে সিদ্ধান্তের জন্য বিশ্ব তাকিয়ে ছিল, সেটিই চূড়ান্ত খসড়া থেকে উধাও।
ফলে সম্মেলনের ফলাফলে ধোঁয়াশা থাকলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি বেশ কম। আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো তো সরাসরিই বলছে, তাদের কণ্ঠস্বরকে মিউট করা হয়েছে।
ঘানার ক্লাইমেট অ্যান্ড সাপোর্ট নেটওয়ার্কের একজন সদস্য সংক্ষেপে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলেন, গ্লোবাল স্টকটেক একটু ট্রাফিক জ্যামের মতো—সবাই এগোতে চায়, কিন্তু কেউই রাস্তাটা ছাড়তে চায় না।
এর মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আলোচনার ভেন্যু অ্যামাজন কনভেনশন সেন্টারে আগুন লাগে। দিনের অর্ধেক সময় ধরে আলোচনা বন্ধ রাখা হয়। কেউ কেউ মজা করে বললেন, জলবায়ুর উত্তাপ যে সত্যিই বাড়ছে, তার প্রমাণ তো মিটিংরুমেই মিলল! তবে ওই আগুনের কারণে জলবায়ু অর্থায়ন ও জ্বালানি রূপান্তর নিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাই থমকে যায়।
অন্যদিকে আদিবাসী নেতাদের ক্ষোভ তীব্র। তাদের অভিযোগ— অ্যামাজন নদীতে তেল উত্তোলন বা বাণিজ্যিক নৌচলাচলের মতো প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ জানানোর সুযোগই দেওয়া হয়নি। গ্লোবাল এনগাজা মিন্ডোর নির্বাহী পরিচালক থালিয়া সিলভা বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির মতো শব্দটি কপ-২৬ ও কপ-২৮-এ এত কষ্টে স্থান পেয়েছিল, এবার তো সেটাই আবার হারিয়ে গেল। আলোচনার গতি এমন ধীর যে মনে হচ্ছে জলবায়ুর চেয়ে ফাইলের পাতাই বেশি ওজনধারী।
বিশ্লেষকদের মতে, সময় কমে এসে দরকষাকষি আরও ধীর হলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার লক্ষ্যটাই হয়তো ঐতিহাসিক প্রত্নবস্তু হয়ে উঠবে। সব মিলিয়ে কপ-৩০ এর আঙিনায় হতাশার ছায়াই যেন গাঢ় হয়ে উঠেছে।
অংশগ্রহণকারীরা শেষে মুখে হাসি নিয়ে বিদায় নিলেও বাতাসে রয়ে গেল একটাই প্রশ্ন— পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কি আলোচনার আগুনে পুড়ছে, নাকি ধোঁয়ার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে সমাধানের সব পথ?
মন্তব্য করুন