কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।
এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একযোগে ফোন করেছেন ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ নেতাদের। দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাতে বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবালের পৃথক প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও আলাদাভাবে ফোনে কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও পেহেলগামের প্রাণঘাতী হামলার নিন্দা জানান এবং নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তবে তিনি সতর্ক করে দেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার আগে যেন ভারত যথাযথ প্রমাণ নিশ্চিত করে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা হ্রাসে ভারতের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংকট মোকাবিলায় পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে আলাপে রুবিও হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এই অযৌক্তিক সহিংসতার তদন্তে পাকিস্তানকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইসলামাবাদ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ভারতের উসকানিমূলক বক্তব্য ও পদক্ষেপ কেবল উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং আমাদের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেন, ভারত যেন আরও দায়িত্বশীল ও সংযত আচরণ করে—এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা উচিত।
কাশ্মীরের পেহেলগাম ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তান ইতিমধ্যে একাধিক পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করেছে, একটি প্রধান সীমান্ত চেকপোস্ট বন্ধ করেছে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানি দূতাবাসে কর্মরত সামরিক উপদেষ্টাদেরও বহিষ্কার করেছে।
এর জবাবে পাকিস্তান ভারতের জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে, শিখ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ ভ্রমণ ব্যতীত সব ধরনের ভারতীয় ভিসা বাতিল করেছে এবং ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও সিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মন্তব্য করুন