পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঠেকাতে চেষ্টার কমতি রাখা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে একের পর এক আইনি জটিলতার মধ্যে দিয়ে সময় পার করছেন তিনি। নির্বাচন থেকে দূরে সরাতে তাকে রাখা হয়েছে কারাগারে। এরপরও সর্বোচ্চসংখ্যক আসন পেয়েছেন তার দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এবার তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া নিয়ে মুখ খুলেছেন জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের (জেইউআই-এফ) প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান।
শুক্রবার জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সাবেক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার নির্দেশে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মাওলানা ফজলুর রহমান।
টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইমরান খানকে ২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার তৎপরতা শুরু হয়েছিল পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) নামের একটি জোটের মাধ্যমে। নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন, বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পিপিসিহ বেশ কয়েকটি দল মিলে জোটটি গঠন করে। এ জোটের প্রধান ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এ অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিলাম। কিন্তু অন্য দলগুলোর চাপাচাপির মুখে আমি না বললে পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতাকে রক্ষা করছি বলে তকমা লাগানো হতো।
ইমরান খান নিজেকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে আসছেন। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে জো বাইডেন প্রশাসন। পরে অবশ্য সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার ওপর এ দোষ চাপান ইমরান খান।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক সাক্ষাৎকাররে জেনারেল বাজওয়ার সঙ্গে এক সাংবাদিকের কথোপকথনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন যে পিটিআই সরকার উৎখাতের পেছনে তার হাত ছিল , বিষয়টি জেনারেল বাজওয়া স্বীকার করে নিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে পাল্টা মন্তব্য করেছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) মুখপাত্র মরিয়াম আওরঙ্গজেব। তিনি বলেন, ফজলুর রহমানের দাবির আনুসারে সাবেক সেনাপ্রধান বাজওয়ার নির্দেশে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতো কোনো কিছু তারা দেখেননি। তিনি বলেন, সাংবিধানিক নিয়মন মেনে বহুদলীয় জোট ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করে।
জিও নিউজের এক অনুষ্ঠানে পিএমএল-এন মুখপাত্র বলেন, মাওলানা ফজলুর রহমানের বিবৃতির বিষয়টি কেবল তিনি তিনিই ব্যাখ্যা দিতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে তার দল আগামীকাল আরও মন্তব্য করতে পারে বলেও জানা তিনি।
২০২২ সালের ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বিদায় নেন ইমরান খান। সেই সময় জাতীয় পরিষদের ৩৪২ জন সদস্যের মধ্যে ১৭৪ জন সদস্য তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ভোট দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খানই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, যাকে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে।
সরকার থেকে বিদায় নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক আইনি জটিলতায় পড়ছেন ইমরান খান। তার নামে প্রায় ২০০ মামলা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি চার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ইমরানকে ৩৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১০ বছরের জন্য তাকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে পিটিআই ও ইমরান-সমর্থকদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে এসব সাজা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কারাগারে বন্দি তিনি।
মন্তব্য করুন