সাম্প্রতিক সংঘাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের দুটি প্রধান তেল শোধনাগার আশদোদ ও হাইফা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইরান অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হানে বলে দাবি করে আইআরজিসি। জানা যায়, কৌশলগত এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের জ্বালানি খাতকে অচল করে দেওয়া এবং দেশটির অর্থনীতি ও সামরিক ক্ষমতার ওপর আঘাত হানা।
পার্সটুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সফল হামলার পর ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম আশদোদ তেল শোধনাগারটি গত ১৫ জুন থেকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল। ৪ জুলাইয়ের মধ্যে এটি পুনরায় চালু হওয়ার কথা থাকলেও প্রযুক্তিগত সমস্যায় এখনো তা চালু করতে পারেনি ইসরায়েল।
ইরানি সংবাদমাধ্যম ডেইলি কেইহানের বরাতে পার্সটুডে আরও জানিয়েছে, এই অচলাবস্থার ফলে শোধনাগার কর্তৃপক্ষ প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ফলে ইহুদিবাদী দেশটি এখন জ্বালানি আমদানির দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উত্তর ইসরায়েলের উপকূলীয় শহর হাইফায় অবস্থিত বাজান গ্রুপের মালিকানাধীন হাইফা শোধনাগারটি, যা দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ জ্বালানি সরবরাহ করে, সরাসরি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়। হামলায় এর বয়লার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এটি পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকও স্বীকার করেছেন, হাইফা শোধনাগারে হামলার পর ইসরায়েলে পেট্রোল উৎপাদন শূন্যে নেমে এসেছে।
ইরান কেন এই শোধনাগারগুলোকে লক্ষ্য করল?
প্রথমত, অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে দুর্বল করাই ছিল ইরানের অন্যতম লক্ষ্য। বাজান শোধনাগার ইসরায়েলের অর্থনীতিতে একটি কেন্দ্রীয় অবকাঠামো। এটি পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন, জ্বালানি সরবরাহ এবং শিল্প খাতে জ্বালানির উৎস হিসেবে কাজ করে। এই শোধনাগারে হামলা ইসরায়েলের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে, যার ফলে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, ঘাটতি ও শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতায় ধাক্কা দিতে চেয়েছিল ইরান। হাইফা শোধনাগার ইসরায়েলি বিমান বাহিনীকে জেট জ্বালানি সরবরাহ করে। এতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের স্বল্পমেয়াদি সামরিক তৎপরতা দুর্বল করে দিতে পারে।
তৃতীয়ত, এই হামলা ছিল কৌশলগত প্রতিশোধ ও বার্তা। বাজান গ্রুপ ও এর নিয়ন্ত্রক ওফার ব্রাদার্স, যারা ইসরায়েলের অন্যতম বৃহৎ শিল্প হোল্ডিং, তাদের বাণিজ্যিক জাহাজ সম্প্রতি বিভিন্ন হামলার শিকার হয়েছে। ইরান এই আঘাতের মাধ্যমে একটি কৌশলগত বার্তা দিয়েছে যে, প্রয়োজন হলে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক এবং সামরিক রন্ধ্রে সরাসরি আঘাত হানতে তারা সক্ষম।
ইরানের জন্য আশদোদ ও হাইফা তেল শোধনাগারে হামলা ছিল পরিকল্পিত ও কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ। এই হামলার মাধ্যমে তারা ইসরায়েলের জ্বালানি নির্ভরতা, সামরিক কার্যক্ষমতা এবং অর্থনীতিকে একযোগে আঘাত করেছে, যা ভবিষ্যতের যুদ্ধকৌশলেও প্রভাব ফেলতে পারে।
মন্তব্য করুন