তেল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার নামডাক থাকলেও খনিজ সম্পদেও ভরপুর দেশটি। তাই ভেনেজুয়েলা চীনের জন্য বেশ আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব খনিজ সম্পদ উত্তোলনে প্রচুর বিনিয়োগের দিকেও চোখ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতার পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সম্পর্কও বাড়াচ্ছে চীন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট সাময়িকীতে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন রাজনীতি বিশ্লেষক জুয়ান পি ভিলাসমিল। সেখানে ভেনেজুয়েলার প্রতি চীনের এমন আগ্রহ নিয়ে লেখেন তিনি।
ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, গত ১৭ মে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের উপমন্ত্রী লিন মিংজিয়াংয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। সেখানে তারা দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও জোরদারের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। যা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টির হয়েছে।
এর কয়েক সপ্তাহ আগে মাদুরো চীনা রাষ্ট্রদূত লি বাওরংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের সাংবাদিক প্যাট্রিসিয়া লায়া ও ফ্যাবিওলা জেরপা বলেন, দুই দেশ আবার সরকারি যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপন করছে। যদিও লেখক জুয়ান পি ভিলাসমিল তাদের উদ্দেশে বলেছেন, এসব বৈঠক মার্কিন-চীন বৈরিতাকে বাড়ানোর প্রতিক্রিয়া। এটিকে ‘সম্প্রীতি’ বললে ঠিক হবে না।
জুয়ান পি ভিলাসমিল বলছেন, টিভির পর্দায় দেখা না গেলেও মাদুরো সরকারের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা এমনিতেই অব্যাহত রয়েছে। এ সহযোগিতা শুধু যে তেলের জন্য, তা নয়। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে খনিজ সম্পদও। বেইজিংয়ের সমর্থনে ভেনেজুয়েলার এ খাত অনেকটা নিঃশব্দেই প্রসারিত হচ্ছে।
দুই বছর আগে একটি ভিডিও কনফারেন্সে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউসের জেরার্ডো বার্থিন জানান, এখন ভেনেজুয়েলায় চীনের অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, ২০০৭ সাল থেকে চীন ভেনেজুয়েলাকে প্রায় ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। এ ছাড়া বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ৪৯০টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বার্থিন আরও জানান, এ চুক্তিগুলোর মধ্যে ৬৫ শতাংশ চুক্তিতে যে শর্ত রয়েছে, তার বেশিরভাগই গোপন ও রহস্যময়। এ ছাড়া মাত্র ২২ শতাংশ চুক্তি সম্পর্কে আংশিক তথ্য রয়েছে।
ভেনেজুয়েলার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মাদুরো প্রশাসনের আচরণ বিবেচনা করে লেখক ভিলাসমিল অনুমান করছেন, চীন ভেনেজুয়েলার কিছু খনিজ সম্পদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ভেনেজুয়েলার সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদরা মনে করেন, চীনা কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলার আর্কো মিনেরোতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। দেশটির ইকোলজিক্যাল মাইনিং ডেভেলপমেন্টের সাবেক মন্ত্রী রবার্তো মিরাবালের মতে, আর্কো মিনেরো এমন একটি এলাকা, যেখানে দুই ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যমানের খনিজ সম্পদ রয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতার মধ্যেই চীন ভেনেজুয়েলা, কিউবা, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এর মধ্যে তেল-নিরাপত্তার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদির দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য নিয়েও বাড়ছে চীনের আগ্রহ।
মন্তব্য করুন