চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বাস্তবায়নের এই হার এ যাবতকালের সর্বনিম্ন। এর আগে কখনো এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়নে নতুন রেকর্ড। বর্তমান এডিপি থেকে সরকার বড় কাটছাঁট করতে চায়। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থছাড়ে ধীরগতির প্রভাব এডিপি বাস্তবায়নে পড়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাদ্দের হিসাবে বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়ই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না।
আইএমইডির ওয়েবসাইটে ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে কোনো অর্থবছরই এডিপি বাস্তবায়ন হার ৩ শতাংশের কম নেই। গত অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ, আগের অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সরকারের এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।
আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২৪১ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর আগে কোনো অর্থবছরের একই সময়ে এত কম খরচ হয়নি। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৬ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা, যা ওই অর্থবছরের এডিপিতে সরকারি তহবিলের বরাদ্দের ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
অন্যদিকে বৈদেশিক সহায়তা খাতের বরাদ্দ থেকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ব্যয় হয়েছে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ বা ৩ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। এ অঙ্ক গত অর্থবছর ছিল ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া অনেক বড় মন্ত্রণালয় ও বিভাগও প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করতে পারেনি। এর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, সেতু বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ বরাদ্দের ২ দশমিক ৪৭, বিদ্যুৎ বিভাগ ৩ দশমিক ১৬, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১ দশমিক ০৫, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১ দশমিক ৯৩, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ০ দশমিক ৬৫ এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ০ দশমিক ৫০ শতাংশ ব্যয় করেছে।
আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত প্রস্তুতিমূলক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে অর্থবছরের শুরুতে এডিপি বাস্তবায়ন হার কম থাকে। এ ছাড়া জুলাইজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলা ব্লকেড ও অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাবেও এডিপি বাস্তবায়নের হার পড়েছে।
এ ছাড়া সরকার পাইপলাইনে থাকা প্রস্তাবিত প্রকল্পের পাশাপাশি চলমান প্রকল্প নতুন করে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে চলমান অনেক প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবও আটকে গেছে। সব মিলিয়ে এডিপি বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
আইএমইডি বিভাগের সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। প্রকল্পে বরাদ্দ ও অর্থছাড়ের সিদ্ধান্ত হচ্ছে ধীরগতিতে। এ কারণে জুলাই-আগস্টে এডিপি বাস্তবায়ন হার কমেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দায়িত্ব নেওয়ার পর অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের এডিপির বড় কাটছাঁট চায় সরকার। এরই প্রভাব এডিপি বাস্তবায়নে পড়েছে বলে মনে করেন তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কাটছাঁট হতে পারে। তাই বেশি প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোয় অর্থছাড় হচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রাধিকার যাচাই-বাছাই হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।