কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কৃষি ও ওষুধ খাতে ৪শ কোটি বিনিয়োগ করবে এনএসি

উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে
কৃষি ও ওষুধ খাতে ৪শ কোটি বিনিয়োগ করবে এনএসি

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কৃষি-রাসায়নিক ও বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার (এনএসি)। ২০২৭ সালের মধ্যে ওষুধ, ন্যানো সার, বীজ, কীটনাশক এবং খাদ্য, পানীয়সহ একাধিক খাতে মোট ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই বিনিয়োগের লক্ষ্য হলো, এনএসির পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়ন, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ২ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

ঘোষিত বিনিয়োগের মধ্যে ১৮০ কোটি টাকা যাবে প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ প্রস্তুতকারী অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওয়ান ফার্মা লিমিটেডে। ৭০ কোটি টাকা ন্যানো সার উন্নয়নে, ৬০ কোটি টাকা খাদ্য ও পানীয় খাতে, ৫০ কোটি টাকা কীটনাশকে এবং ৪০ কোটি টাকা বীজ উন্নয়নে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ন্যানো টেকনোলজিভিত্তিক সার, উন্নত কীটনাশক ও হাইব্রিড ধানবীজ নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছে।

এনএসির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার বলেন, বর্তমানে আমাদের ৯টি ব্যবসায়িক ইউনিট এবং একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নতুন বিনিয়োগগুলো পণ্যের বৈচিত্র্য আনবে এবং রপ্তানি আয়ে সহায়তা করবে। আমাদের ন্যানো সার মাঠপর্যায়ে সফলভাবে পরীক্ষিত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর আরও বড় পরিসরে বিনিয়োগ শুরু করব। পাশাপাশি ওষুধ খাতে রপ্তানি চাহিদা বাড়ছে। তাই ভবিষ্যতে এ খাতও সম্প্রসারণ করব।

ওষুধ রপ্তানিতে ‘ওয়ান ফার্মা’র অগ্রগতি: বগুড়ার বিসিক শিল্পনগরীতে ২০১৫ সালে গড়ে ওঠা ওয়ান ফার্মা লিমিটেড ২০১৮ সালে ওষুধ রপ্তানি শুরু করে। ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি আফগানিস্তানে ২০ লাখ ডলারের ওষুধ ও মিয়ানমারে ৫০ হাজার ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ইয়েমেনসহ আগামী তিন বছরের মধ্যে আরও ১০টি নতুন দেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ওয়ান ফার্মা ক্যান্সার চিকিৎসা সংক্রান্ত ওষুধসহ হৃদরোগ, অ্যান্টিবায়োটিক, মানসিক রোগ, গ্যাস্ট্রিক ও ছত্রাকনাশক ওষুধ উৎপাদন করে।

প্রতিষ্ঠানটির চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ইশতিয়াক আহমাদ জানান, আলজেরিয়া আমাদের ওষুধ আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায় চলছে। ওয়ান ফার্মার বার্ষিক টার্নওভার এখন ১৫০ থেকে ১৮০ কোটি টাকা। গত বছর প্রবৃদ্ধি ছিল ৬১%। এলডিসি উত্তরণের পর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নীতিগত সহায়তা দরকার।

ন্যানো সার সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ: বাংলাদেশে ন্যানো সারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী এনএসি। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ন্যানো টেকনোলজি সার ব্যবহারে দক্ষতা ও স্থায়িত্ব অনেক বাড়বে।

পণ্যটির উদ্ভাবক এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাভেদ হোসেন খান জানান, কৃষকরা এখন ৫০% পর্যন্ত কম সার ব্যবহার করতে পারবেন। আমাদের ন্যানো সার ৯০% এর বেশি পুষ্টি ব্যবহার দক্ষতা দেয়। যেখানে প্রচলিত সার বেশি অপচয় হয়। মাত্র ৫০০ মিলিলিটার ন্যানো-ইউরিয়া ৫০ কেজি প্রচলিত ইউরিয়ার সমতুল্য। এই সার পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী। এটি স্প্রে বা ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতিতে ব্যবহারযোগ্য, যা সহজলভ্য ও কার্যকর। এ ছাড়া দেশে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কীটনাশক উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর: বাংলাদেশে কীটনাশক খাতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক বাজারের আকার ছিল ৮৪.৫ বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ২%। দেশে কৃষি উৎপাদনে খরচের প্রায় ২০% যায় কীটনাশকে। তবে দেশে প্রতি হেক্টরে কীটনাশক ব্যবহারের হার মাত্র এক কেজি। যেখানে চীনে ১৩ কেজি, জাপানে ১১ এবং ভারতে ২ কেজি। বাংলাদেশ অ্যাগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বামা) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে চীন ৪০%, যুক্তরাষ্ট্র ২২% ও ভারত ৭% কীটনাশকের চাহিদা পূরণ করে। আমদানিনির্ভরতা কমাতে এনএসি ও বামা নীতিগত সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে।

মোস্তাফিজুর বলেন, ‘স্থানীয় কৃষি-রাসায়নিক শিল্পকে সহায়তা করতে শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাস জরুরি। সরকারি সহায়তা থাকলে আমরা আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে পারব এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রবেশ করতে পারব।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিয়েতে দাওয়াত না দেওয়ায় সংঘর্ষ

৮০০ বছর ধরে শক্তি জমছে নরসিংদী অঞ্চলে, বড় ভূমিকম্প হবেই

বাংলাদেশিদের আপ্যায়নে আবেগাপ্লুত সাদিও মানে

পুলিশের হাতে কামড় দিয়ে পালালেন রবিন

প্রাইম ইউনিভার্সিটির ৩য় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

নির্বাচন না হলে দেশে সংকট দেখা দেবে : জামায়াত আমির

দল থেকে সুখবর পেলেন বিএনপির ১০ নেতা

অ্যালকালাইন ওয়াটার আসলে কতটা উপকারী

শক্তিশালী পিঠ বানানোর আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম : সামান্থা

নানা আয়োজনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১০

১০০ দিনে ক্যাপিটালসে মোস্তাফিজকে ঘিরে অদ্ভুত নাটক

১১

এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলও নরসিংদী

১২

‘সংসদ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে’

১৩

গৌহাটিতে প্রথম দিন শেষে চাপে প্রোটিয়ারা

১৪

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা, কবে কোথায় আঘাত হানবে

১৫

আইরিশদের হোয়াইটওয়াশ করার সন্নিকটে বাংলাদেশ

১৬

জাহেলি যুগ আর ফিরে আসবে না : ধর্ম উপদেষ্টা

১৭

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো গ্রেপ্তার

১৮

সংবিধানই বিচার বিভাগের বৈধতার বাতিঘর : প্রধান বিচারপতি

১৯

জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে সিদ্ধান্তের টানাপোড়েনে শেষ হলো কপ সম্মেলন

২০
X