দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফের বাড়ছে। ফলে দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে ধারাবাহিক উত্থানে ফিরছে পুঁজিবাজার। টাকার অঙ্কে দৈনিক লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে সূচকের পরিমাণও। মূলত বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার খবরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বেড়েছে। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে বিনিয়োগকারীরা ফের বাজারমুখী হচ্ছেন।
গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন বেড়ে এক হাজার একশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরে এই প্রথম ডিএসইতে এক হাজার একশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো। এর মাধ্যমে প্রায় এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেনের ঘটনা ঘটল। এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়ার দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে প্রায় একশ পয়েন্ট।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানো এবং সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ায় পুঁজিবাজারে এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ১৫ শতাংশ কমাতে পারা একটি বড় সাফল্য। এতে পোশাক খাতের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হতেই প্রায় সবকটি বস্ত্র কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। এতে প্রথম মিনিটেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য খাতেরও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। এতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাও বাড়তে থাকে। লেনদেনের শেষদিকে কিছু বস্ত্র কোম্পানির শেয়ারের দাম কমলেও অন্য খাতগুলো দাম বাড়ার প্রবণতা ধরে রাখে। এতে মূল্যসূচকের বড় উত্থান দিয়েই শেষ হয় দিনের লেনদেন।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলিয়ে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২১৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১২২টির। এ ছাড়া ৫৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪২টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৫৪টির দাম কমেছে এবং ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৫০ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৬৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৭৪ কোটি ১ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সবথেকে বড় ভূমিকা রেখেছে উত্তরা ব্যাংক। কোম্পানিটির ৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকার। ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিটি ব্যাংক।
অপর পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৭০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৮টির এবং ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
মন্তব্য করুন