আগামী ২৬ জুন পাস হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১ জুন জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহলে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে হচ্ছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কোথায় কোথায় বাজেট পদক্ষেপে ঘাটতি রয়েছে এবং সম্ভাবনার জায়গাটি কেমন, তার চুলচেরা বিশ্লেষণও হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতের বিভিন্ন সংগঠন ও গবেষণা সংস্থা থেকে মতামত প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিও (এফবিসিসিআই) বসে নেই। প্রস্তাবিত বাজেটের অসামঞ্জস্য বা ঘাটতিগুলো চূড়ান্ত বাজেটে যাতে না থাকে, সে লক্ষ্যে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ৪২টি বিশেষ প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করেছে। এফবিসিসিআই সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি এমন সুপারিশ সংবলিত একটি লিখিত প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ওই সুপারিশ প্রস্তাবনায় আমদানি শুল্ক-সংক্রান্ত ১২টি; আয়কর-সংক্রান্ত ১২টি; মূল্য সংযোজন কর-সংক্রান্ত ৯টি; মূল্য সংযোজন কর-সংক্রান্ত খাতভিত্তিক বিশেষ ৯টি প্রস্তাব এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং চলমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই জাতীয় উন্নয়নই এফবিসিসিআইর এসব প্রস্তাবনার মূল লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃতে গঠিত শুল্ক-রাজস্ব নীতি সংস্কার কমিটির একাধিক সাব-কমিটিসহ বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে জাতীয় শুল্কনীতি প্রস্তাবনার সহমত ভিত্তিক বিভিন্ন সুপারিশের আলোকে এই ৪২ বিশেষ প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়। বৈশ্বিক-সরবরাহ চেইনে সুসংযুক্ত, জনবান্ধব, বিনিয়োগবান্ধব এবং উৎপাদনশীল টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা এবং পরিকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে তাদের এই প্রস্তাবগুলো পুনর্বিবেচনা জরুরি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে এখন শুধু সংসদ সদস্যরাই ভূমিকা রাখতে পারেন।
প্রস্তাবনায় এফবিসিসিআই রাজস্ব আহরণ এবং রাজস্ব পলিসি কার্যক্রম পৃথক করে ‘ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগ গঠন করার আহ্বান রেখেছে। রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যয় এবং সময় কমাতে রপ্তানি মূল্যপ্রাপ্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেরত প্রদান, রপ্তানি খাতসহ শিল্প বাণিজ্য খাতে উৎস ও আগাম কর ফেরত দেওয়ার পরিবর্তে বাতিল করার অনুরোধ করেছে। এ ছাড়া সব রপ্তানি এবং শিল্প খাতে করমুক্ত বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়েছে। খাত এবং বাজারভিত্তিক অসংগতি নিরসন এবং খরচ কমানোর লক্ষ্যে গ্রামীণ ও ক্ষুদ্র, নারী উদ্যোক্তাসহ সব উৎপাদনমুখী খাতকে বিশ্ব সরবরাহ চেইনে সংযুক্ত করতে উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে খাতভিত্তিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌথ ব্যবস্থাপনায় বন্ডেড ওয়্যার হাউসের সুবিধা চাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি কামাল মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে যে প্রস্তাব করা হয়েছে, পৃথিবীর কোনো দেশে এমনটি নেই। একটি প্লট প্রথমবার কিনতে ক্রেতাকে অনেক খরচ করতে হয়। কিন্তু সেই প্লট দ্বিতীয়বারের ক্রয়বিক্রয়ে খরচ কম হবে, এটিই নিয়ম। কিন্তু এবার সেটি রাখা হয়নি। এফবিসিসিআই যে প্রস্তাব করেছে, তা শতভাগ যৌক্তিক। এমনিতেই নির্মাণ খাতের সব পণ্যের দাম বেশি। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ালে আবাসন খাত বলতে তেমন কিছু থাকবে না। আশা করছি, এফবিসিসিআইর প্রস্তাবটি সরকার বিশেষ বিবেচনায় গ্রহণ করবে এবং আবাসন খাতের পাশে দাঁড়াবে।
এফবিসিসিআইর প্রস্তাবনায় শুল্ক আইনের ১৫৬(১) সেকশনের টেবিল এসএল৯ এ অপরাধের শাস্তি অজ্ঞতা ও ভুলকৃত ক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রের পরিবর্তে ইচ্ছাকৃত অপরাধের সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল্য সংযোজন কর প্রস্তাবে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেট ২৪৮, ২৪৯ এবং ২৫০ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লিখিত কয়েকটি পণ্যে ১৫, ৫, সাড়ে ৭ এবং ২ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা হয়েছে, যা মূসক আইনের মৌলিক নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। পণ্য এবং সেবা খাতে মূল্য সংযোজন ভিত্তিক একক ১৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা হলে খাত নির্বিশেষে সব পণ্য এবং সেবা খাত বিভিন্ন এসআরও ভিত্তিক অসম করহার এবং জটিলতা থেকে রেহাই পাবে এবং কর ব্যবস্থা সহজ ও সরল হবে।
সার্বিক বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ কালবেলাকে বলেন, ব্যবসায়ীরা তাদের জন্য প্রস্তাব করবেন, এটা যৌক্তিক। তবে আমার প্রশ্ন হলো এখন কেন? বহুদিন থেকে একই পদ্ধতি হয়ে আসছে। সংসদে যে প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে, সেখানে একটি অর্থবিলও উত্থাপিত হয়। সে বিষয়ে সংসদ সদস্যরা তাদের মতামত দিয়ে থাকেন। সেজন্য বলছি, ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পক্ষে এখন কিছু করতে হলে সংসদ সদস্যদের কাছে প্রস্তাব করতে হবে। অর্থমন্ত্রী আর এনবিআরের কাছে করে কিছু হবে না। কারণ, এখন একমাত্র ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের। তারা কণ্ঠভোট ও আলোচনায় ব্যবসায়ীদের পক্ষে অবস্থান নিলে তাহলেই এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এ ছাড়া অনেক কঠিন।
মন্তব্য করুন